সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা: একবার না পারিলে দেখো আরেকবার

“কোথাও চান্স পেলাম না। সত্যিই কি আমি এতটা খারাপ? হয়তোবা …’’
 “সাধারণ জ্ঞান  নিয়ে হেলাফেলা করা একদম উচিত হয়নি।”
 “বায়োলজি ভালোভাবে পড়লে অন্তত কিছু একটা করতে পারতাম।”
 “আব্বু আম্মুর মুখের দিকে তাকানোই যাচ্ছে না। কী করবো ভেবেই পাচ্ছি না।”
ভর্তি পরীক্ষার তুমুল যুদ্ধে হেরে গেলে এমন সব চিন্তা ভাবনা বা কথাবার্তার সাথে পরিচিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। আর জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত হার হতাশার পরিমাণকে কয়েকশো গুণে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে হতাশ হয়ে বসে থাকলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? মোটেও না, বরং সেটি হবে সবচেয়ে বড় বোকামি।
জীবনের যে কোন পর্যায়ে  ব্যর্থ হওয়ার সবচেয়ে ভালো দিকটি হোল- এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যর্থতা আমাদের ভুলগুলোকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আমাদেরকে ঘুরে দাঁড়ানো শেখায়, আর শেখায় “কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন করার পথটি মোটেও অসম্ভব কিছু নয় বরং অধ্যবসায় আর পরিশ্রম দিয়ে এই পথ অনায়াসে জয় করা যায়।”
সত্যিই যদি ভেবে না পাও কী করবে, তবে আমি একটি পরামর্শ দিতে পারি। সব হতাশা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে, “পাশের বাসার আন্টি” কিংবা প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজনদের কটূক্তি উপেক্ষা করে তুমি আরেকবার চেষ্টা করে দেখতে পারো। তুমি যে মোটেও হাল ছাড়ার মানুষ নও সেটি প্রমাণের জন্য শুরু করে দিতে পারো সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতি। জীবনে বিজয়ী হতে চাইলে ঝুঁকি তো নেয়াই যায়, তাই না?
হাত পা গুটিয়ে বসে না থেকে চলো আলোচনা করে দেখি এই হতাশার কোনো কুল-কিনারা করতে পারা যায় নাকি !  
ভেবে-চিন্তে  সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার  সিদ্ধান্ত নাও:
 তুমি যদি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারটাতে সত্যিই বিশ্বাস করে থাকো তাহলে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত নিয়ে নাও। এক্ষেত্রে এক বছর নষ্ট হওয়ার দুশ্চিন্তাকে অবশ্যই ঝেড়ে ফেলতে হবে। আবার তুমি যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজে অধ্যয়নরত থাকো, তাহলে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির জন্য সেই পড়ালেখার কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এই ব্যাপারগুলোকে মাথায় রেখে তোমাকে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে।
যদি ভেবে-চিন্তে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারো, তাহলে তোমাকে অভিনন্দন। কেননা সবচেয়ে কঠিন কাজটি তুমি করে ফেলেছো। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্তটি ঠিকভাবে নিতে পারে না, দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তোমার সিদ্ধান্তকে আরও প্রত্যয়ী করে তুলতে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির খুঁটিনাটি বিষয় আমি সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম আছে:
একটু হতাশ করে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার কোন সুযোগ থাকছে না। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ স্থগিত করছে। (সূত্রঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ২০১৮-১৯)। “ইশশ! যদি ঢাবি, রাবি এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ থাকত!’’- সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে, কী নেই সেটি নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং কী আছে সেটি নিয়ে মাথা ঘামানো।
বুঝলে না? সহজ করে দিচ্ছি। ঢাবি, রাবি সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও অনেক স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা তোমার ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে। চলো দেখে নেওয়া যাক কারা তোমাকে সেই সুযোগ করে দিচ্ছে –
১।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (JU), সাভার, ঢাকা। 
২। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রোফেশনালস্ (BUP) মিরপুর, ঢাকা । 
৩। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি (IUT) গাজিপুর। 
৪। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, (SAU), আগারগাঁও, ঢাকা। 
৫। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU), ময়মনসিংহ। 
৬। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BSMRAU), গাজীপুর। 
৭। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (SAU), সিলেট। 
৮। চট্টগ্রাম  ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (CVASU), চট্টগ্রাম। 
৯। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (KU)। 
১০। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (BU)।
১১। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (COU)। 
১২। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় (IU) , কুষ্টিয়া। 
১৩। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (BRUR), রংপুর। 
১৪। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (JKKNIU), ময়মনসিংহ। 
১৫। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (SUST), সিলেট। 
১৬।পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PSTU), পটুয়াখালী। 
১৭। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয় (NSTU), নোয়াখালী। 
১৮। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (PSTU), পাবনা। 
১৯। হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (HSTU) দিনাজপুর। 
২০। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST), যশোর। 
২১। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (MBSTU), টাঙ্গাইল। 
২২। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (BSMRSTU), গোপালগঞ্জ।
সেকেন্ড টাইম মেডিকেল প্রস্তুতি: মেডিকেলে সুযোগ থাকছে কি? 
তোমার জন্য খুশির খবর হল, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ সহ সকল মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকছে।  ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা আরেকবার যাচাই করে দেখতে পারো। কিন্তু বুদ্ধিমানের কাজ হবে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির পুরো সময়টুকুতে সেকেন্ড টাইম মেডিকেল প্রস্তুতির পাশাপাশি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও সেরে ফেলা। এতে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই কমে যায়।
কিভাবে শুরু করবো সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতি:
তোমার পছন্দের প্রায় সব বিষয়ই উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে। কিন্তু পছন্দের সবগুলো বিষয়েতো আর একসাথে পড়া সম্ভব নয়। কাজেই সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার্থী হিসেবে তোমার পরবর্তী করণীয় হচ্ছে কোন বিষয়ে পড়তে চাও, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া আর সেই বিষয়টি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অনুষদে রয়েছে তা খুঁজে বের করা। ধরো সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার্থী হিসেবে তুমি  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এ (Institue of Business Administration)-তে চান্স পেতে চাও। তাহলে জাহাঙ্গীরনগর আই বি এ-এর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান বণ্টন সম্পর্কে তোমার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের কোন অংশে কী পরিমাণ মার্কস থাকে, তার উপর ভিত্তি করে তুমি তোমার সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতিকে আরও পাকাপোক্ত করে নিতে পারো। এভাবে পছন্দের বিষয়ের অনুষদগুলো খুঁজে নিয়ে সেগুলো কোন ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত এবং সেই ইউনিটগুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মান বণ্টনের দিকে খেয়াল রেখে প্রস্তুতি নিলে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতি অনেকটা সহজ  হয়ে যাবে কিন্তু !    
আর যদি সেকেন্ড টাইম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কথাটাও মাথায় রাখো, তাহলে প্রস্তুতিটা জোরেসোরে শুরু করতে হবে। কেননা সেকেন্ড টাইম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থী হিসেবে তোমার ৫ নম্বর কাটা যাবে। কিন্তু  এতে হতাশ হবার কিছুই নেই। যদি তোমার লক্ষ্য ঠিক থাকে এবং সেই অনুযায়ী পরিশ্রমও যথাযথ হয়, তাহলে ৫নম্বর কাটা গেলেও তোমার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নটা অবশ্যই কাটা পড়বে না।
 সেকেন্ড টাইম মেডিকেল প্রস্তুতিতে অঙ্ক নিয়ে শঙ্কাঃ
সেকেন্ড টাইম মেডিকেল প্রস্তুতির পাশাপাশি আমার পরামর্শ হবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিও ঝালাই করে নেয়া। এক্ষেত্রে তুমি যদি সেকেন্ড টাইম মেডিকেল প্রস্তুতি নিয়ে থাকো তবে ম্যাথ উপেক্ষা করা মোটেও উচিত হবে না। যেহেতু তুমি লম্বা একটা সময় পাচ্ছো (প্রায় ৮-৯ মাস!), তোমার সেকেন্ড টাইম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ম্যাথ যুক্ত করে নিলে মোটেই মন্দ হবে না বরং আরও অনেকগুলো রাস্তা তোমার জন্য খুলে যাবে। বায়োলজি, ইংরেজি, বাংলা , সাধারণ জ্ঞান এর সাথে ম্যাথের প্রস্তুতির ফলে মেডিকেলের পাশাপাশি উল্লেখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় সব ইউনিটেই সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে। এইজন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় ম্যাথ এর জন্য আলাদা করে রাখলেই বিষয়টা সহজ হয়ে যায়!
সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতিতে প্রথমবারের যত ভুল আর হেয়ালিপনা:
এটি অনিবার্য একটি বিষয়। সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির সময় তোমাকে অবশ্যই এই জিনিসটি মাথায় রাখতে হবে। প্রথমবার ভর্তি প্রস্তুতিতে হয়তোবা তোমার ফোকাস, মানসিক প্রস্তুতি কিংবা প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব ছিল। তাই পরিশ্রম করেও ফলাফল হয়েছে শূন্য। আবার হয়তো বা তুমি  কোনো কোনো বিষয়ে ঠিকভাবে বা যতটুকু দরকার ততটুকু প্রস্তুতি নাওনি আর তাই কাঙ্ক্ষিত ফলাফলও পাওয়া হয়নি। সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এসকল অনাকাঙ্ক্ষিত দিকগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।
যেই বিষয়গুলোতে তুমি দুর্বল সেই বিষয়গুলোর দুর্বলতা দূর করতে তোমাকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তুমি জনপ্রিয় কিছু অনলাইনভিত্তিক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট এর সাহায্যও নিতে পারো। যেমন, বিষয়ভিত্তিক ক্লাস, মডেল টেস্ট কিংবা বিগত বছরের প্রশ্নপত্রের উপর পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে ১০ মিনিট স্কুল তোমার সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতিকে ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ! গতবার যেই টপিকগুলোকে “কঠিন” ভেবে বাদ দিয়েছিলে এবার শুরুতেই সেই টপিকগুলোকে আয়ত্ত করে নাও। এভাবে প্রতিটি বিষয়ের সবগুলো টপিক আয়ত্তে আনতে পারলে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির দৌড়ে তুমি  কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে গেলে !
এত শত প্রতিযোগীদের ভিড়ে আমি পারব কি পারব না:
সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন ধরনের অহেতুক চিন্তা ভাবনা স্রেফ অজুহাত ছাড়া আর কিছুই না! তুমি ব্যাপারটাকে অন্যভাবে চিন্তা করো। ঠিকঠাকমতো সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতি নেয়ার ফলে তুমি কিন্তু ফার্স্ট টাইমারদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে আছো। মনের মধ্যে এমন উদ্ভট প্রশ্ন আসলে নিজের আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে এইসব সন্দেহ দূর করে দাও।
জীবনের লক্ষ্যে ঠিক করা, সেই লক্ষ্য নিয়ে স্বপ্ন দেখা আর সেই স্বপ্নকে সত্যিতে পরিণত করার মধ্যে অনেকগুলো তফাৎ রয়েছে। অনেকেই জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে, স্বপ্নও দেখে কিন্তু সেই অনুযায়ী অধ্যবসায় কিংবা পরিশ্রম কোনোটাই হয়ে ওঠে না। সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পাওয়ার লক্ষ্য যদি তোমার অটুট থাকে আর সেই সাথে তোমার পরিশ্রম আর অধ্যবসায়টাও যদি কঠোর হয়, তবে আমি কেনো, যে কেউই বলে দিতে পারে যে, “ভয় নেই,তুমিই বিজয়ী হবে”!
সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার জন্য কিভাবে পড়বো:
আমার পরিচিত এক বড় ভাই আছেন যিনি দৈনিক ১৫/১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করেও তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে জায়গা পাননি। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, “Study smart, not hard.” উদাহরণের মানুষটির সমস্যা ছিল তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন ঠিকই কিন্তু মোটেও সমসাময়িক বা স্মার্টভাবে নয়।  আমাদের আশেপাশে এমন অনেক তুখোড় মানুষজন আছেন যাদের অল্প পড়াশোনায় ভালো ফলাফলের ক্ষমতায় আমরা “বিমোহিত আর ঈর্ষান্বিত’’ দুইই হই।  
এসকল তুখোড় মানুষজন কিন্তু মোটেই গৎবাঁধা পদ্ধতিতে পড়ালেখা করেন না। তাঁদের সবচেয়ে  চমকপ্রদ কৌশলটি হোল নিমোনিকের সাহায্য পঠিত বিষয় সহজেই মনে রাখা। কিন্তু নিমোনিক কী? ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। মুঘল সাম্রাজ্য সাধারণ জ্ঞানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হুট করে যদি প্রশ্ন করা হয়, “সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্রের নাম কী?” কিংবা “ সম্রাট আওরঙ্গজেবের পিতার নাম কী?” এমন সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য রয়েছে দারুণ একটি নিমোনিক, সেটি হোল- “বাবার হইল একবার জ্বর সারিল ঔষধে।”
এখানে,
বাবার= বাবর 
হইল= হুমায়ুন 
একবার= আকবর
জ্বর= জাহাঙ্গীর 
সারিল= শাহজাহান
ঔষধ= অাওরঙ্গজেব
কাজেই যেই বিষয়ই পড়া হোক না কেন, পড়া হতে হবে স্মার্টভাবে। কিছু কৌশল মাথায় রেখে পড়তে বসলে পড়াশোনা সহজ হয়ে যায়। এভাবে সব বিষয়ের কৌশলগুলোকে আয়ত্তে আনতে পারলে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির অনেকটাই সেরে ফেলা সম্ভব।
সবকথার শেষ কথা,
পড়াশোনা শুরু করা:
এবার আসল কথায় আসি।  সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়ে, সব তথ্য যোগাড় করে, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যদি পড়াশোনাটাই না করা হয় তাহলে সবই বিফলে গেল। তুমি মনে করতেই পারো যে সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় আছে, আস্তে ধীরে প্রস্তুতি শুরু করবে। কিন্তু নির্মম সত্যটা হল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তোমাকে ফাঁকি দিয়ে সময় অনেক দ্রুত চলে যাবে, আর তুমি সেই “হতাশাগ্রস্ত তুমি” রয়ে যাবে। কাজেই বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে ফার্স্ট টাইম হারের পরই সেকেন্ড টাইম ভর্তি প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া।
এরফলে তুমি যেই বিষয়গুলোতে দুর্বল, সেগুলো বারবার ঝালাই করে নেয়ার সুযোগ তো পাচ্ছই, তার সাথেসাথে তোমার প্রস্তুতি হচ্ছে আরও দৃঢ়। দৈনিক কতক্ষণ পড়াশোনা করবে তার একটা রুটিন করে ফেলতে পারো যেখানে তোমার জন্য “কঠিন”  বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বেশি সময় বরাদ্দ থাকবে। রুটিনের উদ্দেশ্য থাকবে, “ইন্টারনেট ,সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং কিংবা অন্য যতসব কাজই থাকুক না কেন, রুটিনের সময়টুকু ঠিকঠাকমতো পড়বো।” এক্ষেত্রে ফোকাস থাকাটা খুবই জরুরি একটা বিষয়। আর তুমি যদি ফোকাস থেকে প্রস্তুতিটা ঠিকঠাকমতো নিতে পারো তবেই সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষায় একদম বাজিমাত !  
অনেক কথাই তো  বললাম। এবার তোমার স্বপ্ন, অধ্যবসায় আর সফলতার কথা বলার পালা।
স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ছয়বার চেষ্টা করে সাতবারের সময় ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে জয়ী হন। সাত বার চেষ্টা করার সুযোগ তোমার নেই তা সত্যি, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি রবার্ট ব্রুসের মতো আত্মবিশ্বাস আর পরিশ্রমী মনোভাব অবশ্যই তোমার আছে।
সেই আত্মবিশ্বাসে বিশ্বাস রেখে আরেকবার হাল ধরে দেখতেই পারো। তোমার এই “আরেকবার চেষ্টার” সফল গল্পটি হয়তো হতাশ হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা কোনো সেকেন্ড টাইম ভর্তি পরীক্ষার্থীর মনে শতবার অনুপ্রেরণা যোগাবে, শেখাবে আরেকবার হাল ধরতে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ