এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা: কীভাবে প্রস্তুতি নেবো?

ছাত্রজীবনের সবচেয়ে ভয়ানক অভিজ্ঞতা খুব সম্ভবত পরীক্ষা দেওয়া। আর তাও যদি একই পরীক্ষা একবারের বেশি দিতে হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই। তোমরা যারা এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা কিংবা আংশিক পরীক্ষা দেবে, তাদের মনে হয়ত এই মুহূর্তে অনেক ভয় কাজ করছে কিংবা টেনশনে পড়তে পারছ না। অনেকে হয়ত কীভাবে প্রস্তুতি নেবে তা বুঝে উঠতে পারছ না। তোমরা যারা আসন্ন এইচ এস সি মান উন্নয়ন কিংবা আংশিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তিত, এই লেখাটি তাদের জন্যই।

চলো সমস্ত চিন্তামুক্ত হয়ে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নেবে তা চটজলদি জেনে নেওয়া যাক।
পড়ার সময় ঠিক করে নাও:
অনেক শিক্ষার্থীই আগে পড়াশোনা না করে পরীক্ষার আগে তাড়াহুড়ো করে পড়ে যায়। এভাবে কখনই পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব নয়। আমার নিজের দেখা একটি ঘটনা বলি-
২০১৬ সালের এইচ এস সি পরীক্ষায় রসায়ন পরীক্ষার আগের রাতে এক পরীক্ষার্থী প্রচণ্ড টেনশন করছিল। কারণ তার পড়া তখনো শেষ হয়নি। হঠাৎ বন্ধুর কল পেয়ে সে জানতে পারে যে রসায়ন পরীক্ষা বেশ কয়েকদিন পিছিয়েছে। তখন অনেক বেশি আনন্দিত হলেও আবার যখন রসায়ন পরীক্ষার সময় চলে আসে তখন ঐ পরীক্ষার্থীটিই আবার টেনশন করা শুরু করে। কারণ সে আবিষ্কার করে যে, পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ার পরে অতিরিক্ত সময় পেয়েও বন্ধের মাঝে সে কিছুই পড়েনি। শেষমেশ তাড়াহুড়ো করে পড়েই সে পরীক্ষা দিতে যায় এবং মন খারাপ করে বাড়ি ফেরে।  অতএব পরীক্ষার আগে তাড়াহুড়ো করে কিছু নয় বরং এমনভাবে পড়তে হবে যাতে পরীক্ষার আগেই সব পড়া শেষ করে ফেলতে পারো।

পড়ার জন্য সময় ঠিক করে নাও। তোমার কোন কোন বিষয়ের পরীক্ষা হবে সেটা আরেকবার চোখ বুলিয়ে নাও। এরপর সেই বিষয়গুলোর কয়টি করে অধ্যায় আছে এবং তোমার হাতে কতদিন সময় আছে সেটা হিসেব করে অধ্যায়ভিত্তিক কিংবা বিষয়ভিত্তিক সময় ঠিক করে নাও। সব বিষয়েই তুমি সমান পারদর্শী হবে, এমন কোনো কথা নেই। যে বিষয়টিতে তুমি পিছিয়ে আছ সেটিতে বেশি সময় দাও। পাশাপাশি যে বিষয় কিংবা যে টপিকগুলোতে তুমি পারদর্শী, সেগুলোও সমানতালে ঝালাই করে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দাও।
শুধু তুমিই জানো ঠিক কতক্ষণ পড়লে তোমার পড়া শেষ হবে। সেজন্য তুমিই ঠিক করো কোন বিষয়ে তুমি কতটুকু সময় দেবে এবং সারাদিনে কতক্ষণ পড়বে। আর যে বিষয়গুলো তোমার কাছে অনেক বেশি কঠিন মনে হয় সেগুলোতে অবশ্যই বাড়তি সময় দেবে।
কোথায় বসে পড়বে ঠিক করো:
পড়ার জন্য এমন কোনো জায়গা ঠিক করো যেখানে বসে পড়ায় খুব সহজেই মনোযোগ দিতে পারবে। কারো কারো পড়ায় মনোযোগ আনার জন্য নিঃশব্দ পরিবেশের দরকার হয়, কেউ কেউ আবার ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজিয়ে পড়ায় মনোযোগ আনতে পারে। কারো কারো পড়ায় মনোযোগ আনার জন্য যেখানে পড়ছে সে জায়গাটা পরিষ্কার থাকা জরুরী, আবার কেউ কেউ বিছানা, টেবিল ওলটপালট না করে পড়তেই পারে না। তোমাকে দেখতে হবে তুমি কোন পরিবেশে কীভাবে পড়লে পড়ায় মনোযোগ আনতে পারো। সেটা খুঁজে বের করে দেরি না করে এখনি পড়া শুরু করে দাও।
ক্লাস নোটগুলো পড়ে ফেলো: 
ক্লাস লেকচারগুলোতে তুমি যত নোট করেছিলে সব পড়ে ফেলো। নোটগুলো পড়ে তুমি কোন কোন অধ্যায়ে কী ধরণের টপিক আছে সেগুলো আবার ঝালাই করে ফেলতে পারবে। এমনকি যদি কোনো ক্লাসের লেকচার মিস করে থাকো তবে সেটিও বুঝে ফেলতে পারবে।
কিন্তু তুমি যদি নোট নেয়ায় খুব একটা পারদর্শী না হয়ে থাকো তবে তোমার ক্লাসের যে বন্ধুটি ক্লাস লেকচারের নোট ভালোভাবে নেয়, তার সাথে যোগাযোগ করে তার নোটগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে পারো। কারণ অনেক সময় বইয়ে যে জিনিসটা সহজভাবে বোঝা যায় না, সেটি নোট এ সহজভাবে তোলা থাকে যেভাবে শিক্ষক বুঝিয়েছিলেন। এমনকি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও থাকতে পারে সেখানে যেটি দিয়ে বইয়ের অনেক কিছুই বুঝতে ও মনে রাখতে সুবিধা হয়।

আর হ্যাঁ, যখন তুমি পড়াশোনা করছ তখন অবশ্যই নোট করতে ভুলে যেয়ো না। তুমি বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোর নিচে দাগ দিয়ে পড়তে পারো। তবে সাথে সাথে নোটও নিয়ে নিবে। কেননা নোট করে রাখলে সেগুলো পরবর্তীতে বুঝতে খুবই সুবিধা হয়। এমনকি পরীক্ষার আগে যখন পুরো বই পড়ার সময় হচ্ছেনা তখন তুমি কয়েক মিনিটে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু দেখে যেতে পারবে শুধু তোমার নিজের করা নোটগুলো থেকেই।
যে টপিকগুলো বুঝতে সমস্যা হচ্ছে কিংবা মনে রাখতে কষ্ট হচ্ছে সেগুলো নোট করে রাখো। অনেক বেশি কঠিন মনে হচ্ছে যে বিষয়গুলো সেগুলো ধাপ আকারে সাজিয়ে লিখে নোট করে রাখো। মাঝে মাঝে খুলে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে দেখবে অনায়াসেই তুমি বিষয়টা তোমার আয়ত্তে নিয়ে এসেছ।
শিক্ষকের সাথে কথা বলে নাও:
আরেকটি খুব কার্যকরী উপায় হচ্ছে তোমার শিক্ষকের সাথে কথা বলা। শিক্ষকের সাথে পরীক্ষায় কীভাবে কী  করা যেতে পারে সে বিষয়ে কথা বললে উনি বেশ কিছু পরামর্শ দিতে পারেন যেগুলো তুমি কাজে লাগিয়ে বেশ ভালো কিছু করতে পারবে। এছাড়া পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় থেকে কোন ধরণের প্রশ্ন আর কোন ধরণের টপিক সম্পর্কিত প্রশ্ন আসে সেটা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণাও পেতে পারো তুমি শিক্ষকের কাছ থেকে।
প্রশ্নের ধরণ দেখে নাও:
পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে প্রশ্নের ধরণটা দেখা বেশ জরুরী। প্রশ্নপত্রে কী ধরণের প্রশ্ন আসে বা প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দিতে বলে সেগুলো দেখা উচিত। বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে যেগুলোর জন্য বড় আকারে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। আবার কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের জন্য উত্তর দিতে হয় কয়েক লাইনে। সেজন্য প্রশ্নে কোন ধরণের প্রশ্ন আসে সেটা নিশ্চিত হয়ে সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করো।
পূর্ববর্তী বছরের পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান করো:
তোমরা যদি পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো দেখো তাহলে বুঝতে পারবে যে এইচ এস সি পরীক্ষায় কোন ধরণের প্রশ্ন করা হয়। যদিও তোমরা ইতিমধ্যে জানো কী ধরণের প্রশ্ন আসে, তারপরও আগের প্রশ্নগুলো সমাধান করলে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বা বিস্তারিত প্রশ্ন কিংবা কোন কোন টপিক থেকে কীভাবে প্রশ্ন আসে সেগুলোর একটা ধারণা পাবে। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে করতে তুমি এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। এছাড়া তুমি যদি সময় ধরে ধরে সমাধান করতে পারো তবে কোন কোন জায়গায় তোমার কেমন সময় লাগতে পারে সেটার একটা পরিষ্কার ধারণা পাবে।
প্রতিদিন যেভাবে পড়বে:
যখন কোনো পরীক্ষা চলে আসে তখন পরীক্ষার্থী অনেক বেশি পড়ে ফেলে। পরীক্ষার আগে একটা চাপ থাকে যে কারণে পরীক্ষার্থীর মাঝে বেশ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই পরীক্ষার্থী খুব সহজে মাত্র এক বা দুই দিনেই প্রায় পুরো বই শেষ করে ফেলতে পারে। কিন্তু অন্যান্য সময় দেখা যায় পরীক্ষার্থীরা এভাবে পড়াশোনা করছে না; অনেকক্ষেত্রেই তারা গড়িমসি করে। কিন্তু যে কাজটি পরীক্ষার আগে করা সম্ভব, ইচ্ছা করলে সেটি অন্যান্য সময়েও করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য থাকতে হবে প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর জেদ। অন্যান্য সময়েও যদি পরীক্ষার সময়ের মত করে পড়াশোনা করো তবে তুমি শেষ পর্যন্ত কত বেশি ভালো করতে পারবে সেটা চিন্তাও করতে পারবে না।  
পর্যাপ্ত বিশ্রাম, খাওয়া, ঘুম:
সারাদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা শুধু পড়ে গেলেই ভালো ফলাফল আসবে এমনটা ভাবলে তুমি অনেক বড় ঘোরের মাঝে আছ। টানা দীর্ঘ সময়ের জন্য না পড়ে বিরতি দিয়ে পড়ো। এতে তোমার মস্তিষ্ক কিছুক্ষণের জন্যে বিরতি পাবে।

সম্ভব হলে পড়ার মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নাও। নাহলে পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে কী পড়ছ কিছুই বুঝবে না।
আর হ্যাঁ, খাওয়াদাওয়া করতে ভুলে গেলে চলবে না। সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে। ব্রেইনের জন্য উপকারী যেসব পুষ্টিকর খাবার আছে পারলে সেগুলো খাওয়ার চেষ্টা করতে পারো। আর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ার কথা একেবারেই ভুলো না।
আর ভালো ফলাফলের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম কতটা জরুরী তা না বললেই নয়। একবার ঘুমিয়ে নিলে তুমি যা যা পড়াশোনা করেছ সেগুলো সব তথ্য তোমার ব্রেইনের কোষগুলোতে সুন্দরভাবে গেঁথে যায়। সবসময় খেয়াল রাখবে পরীক্ষার আগে যেন পর্যাপ্ত ঘুম এর ঘাটতি না হয়।
সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করবে আর মনে রাখবে ব্রেইনকে যত ঠাণ্ডা রাখবে, গুরুত্বপূর্ণ কাজে তত বেশি মনোনিবেশ করতে পারবে। আর মনের মাঝে গেঁথে নাও যে, তুমি পারবে। প্রস্তুতি নেওয়ার শুরুতেই যদি মনে মনে ভাবতে পারো যে তুমি পারবে তাহলে দেখবে পুরো প্রস্তুতি নেওয়ার সময়টুকু কত সহজভাবে তুমি পার করে ফেলতে পারছ।

পরীক্ষার প্রস্তুতি একেকজন একেকভাবে নিতেই পারে। কিন্তু সবচেয়ে পার্থক্যকারী যে বিষয় সেটি হচ্ছে নিয়মিত পড়াশোনাটা ঠিক রাখা। অনেকে প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করাটা ধরে রাখতে পারেনা। আবার কেউ কেউ জেদ নিয়ে, প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সবাইকে দেখিয়ে দেওয়ার তাড়নায় নিয়মিত থেকে এগিয়ে যায় সাফল্যের দিকে।
কী মনে হয়? তুমি কি পারবে নিয়মিত থেকে সাফল্যকে ছুঁয়ে ফেলতে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ