এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা : কীভাবে দেবো?


আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের আগে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় যে ধাপটিকে সেটি হচ্ছে এইচ এস সি পরীক্ষা। কেননা স্কুল এর ক্লাসগুলোর রেজাল্ট তার পরের ক্লাসের জন্যেই কেবল দরকার হয়। সেখানে এইচ এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট কিংবা পড়াশোনা সবকিছুই একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে এই ধাপটিতে এসে আমাদের অনেকের পর্যাপ্ত মেধা কিংবা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পিছিয়ে যেতে হয়। এরই উদাহরণ হচ্ছেএইচ এস সি পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত জিপিএ না পাওয়া কিংবা কোনো এক বা দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়া।
একটি ছোট্ট কাহিনী বলি
এইচ এস সি পরীক্ষায় সাজিদ একটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয় এবং রিফাত তার কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পায়নি। তারা দুজনে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা এবং আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে পরেরবার বেশ ভালো ফল নিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ করে। এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা শেষে সাজিদ রিফাত দুজনেই দুইটি খ্যাতনামা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে।
এমন যদি হয় যে তোমাদের মাঝেও কেউ সাজিদ বা রিফাত এর মতো কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পাওনি কিংবা একটি/দুইটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছ এবং এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা বা আংশিক পরীক্ষা দেবে ঠিক করে থাকো, তবে এই লেখাটি তোমাদের জন্যই।  
গ্রেডিং পদ্ধতি:
এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা কিংবা আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা নিয়ে কথা বলার আগে এইচ এস সি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের ফল গ্রেডিং পদ্ধতিতে কীভাবে প্রকাশ করে সেটি দেখে নেই
লেটার গ্রেড
প্রাপ্ত নম্বরের শ্রেণি ব্যাপ্তি
গ্রেড পয়েন্ট(জিপিএ)
A+
80-100
5.00
A
70-79
4.00
A-
60-69
3.50
B
50-59
3.00
C
40-49
2.00
D
33-39
1.00
F
00-32
0.00
এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা কী:
কোনো পরীক্ষার্থী যদি এইচ এস সি পরীক্ষায় জিপিএ .০০ না পায় তবে কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পাওয়ার জন্য সে পুনরায় এইচ এস সি পরীক্ষা দিতে পারে। এই পরীক্ষাটিই হচ্ছে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা।  
এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা কারা দিতে পারবে
শেষবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় যে সকল পরীক্ষার্থী জিপিএ .০০ (পাঁচ) এর কম পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে, কেবল সে সকল পরীক্ষার্থী ইচ্ছা করলে পরবর্তী এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তবে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষায় তাদেরকে সকল বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে।
কিন্তু যদি গতবারের এইচ এস সি পরীক্ষায় কেউ আংশিক পরীক্ষার্থী হিসেবে উত্তীর্ণ হয় তবে সে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
সিলেবাস অন্যান্য:
এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে সিলেবাস পরিবর্তিত হয় না। যে শিক্ষাবর্ষের জন্য শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল সেই শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস অনুযায়ীই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আবার এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা দিয়ে যদি কারোর জিপিএ এর উন্নয়ন হয় তবে পরীক্ষার্থীর আগেরবারের পাসকৃত যে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট আর সনদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো বোর্ডে জমা দিয়ে জিপিএ উন্নয়নকৃত একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট আর সনদ গ্রহণ করতে হবে। তবে এই কাজটি কলেজ কর্তৃপক্ষই করে দেয়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদি কোনো কারণে তোমার এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষাও খারাপ হয় এবং এটার জিপিএ আগেরবারের চাইতেও খারাপ হয় তবে তোমার আগেরবারের যে জিপিএ ছিলো সেটিই বহাল থাকবে। সেক্ষেত্রে তোমাকে আগেরবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট আর সনদ দেয়া হবে।
আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা কী:
যদি কোনো পরীক্ষার্থী এইচ এস সি পরীক্ষায় একটি/দুইটি বিষয়ে(চতুর্থ বিষয় বাদে) অকৃতকার্য হয় তবে সে পরবর্তীতে অকৃতকার্য হওয়া একটি/দুইটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এটিই হচ্ছে আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা।
আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা কারা দিতে পারবে:
গত তিনটি এইচ এস সি পরীক্ষায় এক/একাধিকবার পরীক্ষা দিয়েও যেসব পরীক্ষার্থী চতুর্থ বিষয় বাদে একটি/দুইটি বিষয়ে ‘F’ গ্রেড পেয়েছ তারা পরবর্তী এইচ এস সি পরীক্ষায় উক্ত একটি/দুইটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। কিন্তু তোমরা চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারবে না। তবে তোমরা ইচ্ছা করলে চতুর্থ বিষয়সহ সকল বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
সিলেবাস:
আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে সিলেবাস পরিবর্তিত হয় না। যে শিক্ষাবর্ষের জন্য শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল সেই শিক্ষাবর্ষের সিলেবাস অনুযায়ীই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এর আগের এইচ এস সি পরীক্ষায় তোমরা যারা অকৃতকার্য হয়েছ বা কাঙ্ক্ষিত জিপিএ পাওনি তারা যদি পরবর্তীতে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা বা আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা দাও তবে তোমাদেরকে অনিয়মিত এইচ এস সি পরীক্ষার্থী হিসেবে ধরা হবে এবং তোমাদেরকে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবেই সার্টিফিকেট দেয়া হবে। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। সার্টিফিকেট অনিয়মিত পরীক্ষার্থী উল্লেখ করা থাকলেও সেটি পরবর্তীতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না।
রেজিস্ট্রেশন:
এইচ এস সি পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ এটি ছাড়া কেউ পরীক্ষা দিতেই পারবে না। তবে তোমরা যারা এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা বা আংশিক বিষয়ের পরীক্ষা দেবে যেহেতু তাদের আগেই রেজিস্ট্রেশন করা আছে, সেহেতু তোমাদের নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। তবে তোমাদের রেজিস্ট্রেশন এর মেয়াদ যদি শেষ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কেবল একবারের জন্য তোমরা রেজিস্ট্রেশন এর নবায়ন করে নিতে পারবে।
তোমাদের যদি রেজিস্ট্রেশন করা নাও লাগে, তারপরও তোমাদেরকে এইচ এস সি অনলাইন আবেদন করতে হবে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। তবে এইচ এস সি অনলাইন আবেদন এর জন্য তোমাদের কিছু করার প্রয়োজন নেই। তোমরা শুধু কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা বা আংশিক পরীক্ষার জন্য আবেদন করবে। এইচ এস সি অনলাইন আবেদন এর যাবতীয় কাজ কলেজ কর্তৃপক্ষই করে দেবে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা যারা এর আগের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছ তাদের সংশ্লিষ্ট বছরের পরীক্ষার মূল প্রবেশপত্র প্রিন্টকপি জমা দিতে হবে। তোমরা যে কলেজ থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছ সে কলেজ থেকেই তোমাদের এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কোন ক্রমেই তোমরা অন্য কলেজ এর মাধ্যমে পরবর্তী এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
নির্বাচনী পরীক্ষা:
তোমরা যারা এইচ এস সি মান উন্নয়ন পরীক্ষা দেবে তারা ছাড়া সকল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক এবং নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে কেউ এইচ এস সি পরীক্ষা দিতে পারবে না। তবে তোমরা যারা এর আগেই এইচ এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে পারোনি এবং পরবর্তী এইচ এস সি পরীক্ষায় আংশিক বা সবগুলো বিষয়ে পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি চায় তবে তোমাদের এইচ এস সি পরীক্ষায় অধিকতর সফলতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিষয়ভিত্তিক মডেল টেস্ট গ্রহণ করতে পারে। তবে মডেল টেস্ট কোন পরীক্ষার্থীর জন্যই বাধ্যতামূলক নয়।
বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার তাদের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সবার জন্যই বাধ্যতামূলক করেছে। সেক্ষেত্রে তুমি তোমার কলেজ এর নির্দেশনা অনুসরণ করো।
পরীক্ষার্থীদের স্ক্রাইব নিয়োগ:
স্ক্রাইব হচ্ছে এমন কেউ যে স্বাভাবিকভাবে দেখতে বা লিখতে সক্ষম নয় এমন পরীক্ষার্থীর কাছে শুনে শুনে তার পরীক্ষায় লিখে দেয়। তাদেরকে শ্রুত লেখকও বলে। তোমাদের মাঝে যারা চোখে দেখতে পারোনা কিংবা লিখতে সক্ষম নও, তোমাদের চমৎকার মেধা বিকাশের জন্য স্ক্রাইব নিয়োগের সুযোগ আছে এইচ এস সি পরীক্ষায়। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে কলেজে আবেদন করতে হবে। তবে তোমাদের স্ক্রাইবকে দশম শ্রেণীর ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝ থেকে নির্বাচন করতে হবে। আর তোমাদেরকে পরীক্ষায় নির্ধারিত সময়ের পরে অতিরিক্ত ২০ (বিশ) মিনিট পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ