পরীক্ষা সামনে, কিন্তু পড়া শেষ হয়নি?

বর্তমান প্রজন্মের নাম যদি দেওয়া হয় “The Eleventh Hour Generation”  আশা করি খুব একটা ভুল হবে না। তাদেরকে সময় যতই দেওয়া হোক না কেন তারা সবকিছু করতে বসবে সেই শেষ মুহূর্তে। পড়াশোনা অর্থাৎ পরীক্ষার প্রস্তুতিও তার ব্যতিক্রম নয়।
“কালকে পড়বো এখনো তো অনেক দিন বাকি……………”
এই কালকে পড়বো-র পুনরাবৃত্তি করতে করতে পরীক্ষা দ্বারপ্রান্তে দণ্ডায়মান। অথচ সিলেবাসের কিছুই পড়ার সুযোগ মেলে নি। এই সমস্যা আমাদের সবার বেশ পরিচিত এক সমস্যা। অথচ সময়ের পড়াগুলোকে যদি সময়েই শেষ করে ফেলা হতো তবে কিন্তু এই বিদঘুটে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় না। অনেক উপদেশ হলো। যেটা হবার সেটা যেহেতু হয়েই গেছে, এবার অল্প যেটুকু সময় বাকি সে সময়টাকে কাজে লাগাতে পারলেও কিন্তু বিপদ অনেকাংশে কেটে যাবে।
ছাত্রজীবনে এই “কালকে পড়বো……” – এর চক্করে ফেঁসে গিয়ে একদম শেষ মুহূর্তে এসে কান্নাকাটি আমিও করেছি। কিন্তু কান্নাকাটি করে লাভ যে খুব একটা হবে তা কিন্তু নয়। বরং এতেও সেই সময়ই নষ্ট হবে। পরীক্ষার একদম দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে, এমতাবস্থায় প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন সেটা হলো মাথা ঠান্ডা রেখে কুশলী হয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।  
পরীক্ষাকে দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে করণীয় কিছু কৌশল জেনে নেওয়া যাক তাহলে। 
মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি: প্রস্তুতি হয় নি অথচ পরীক্ষার আর তর সইছে না! এই সমস্যাটা তোমার আমার সবার পরিচিত সমস্যা। আমাদের প্রত্যেকেই জীবনের কোনো না কোনো পরীক্ষায় এই পাপের ফল ভোগ করে এসেছি। কাজেই পরীক্ষার প্রস্তুতি তুমি বাদে বাকি সবাই নিয়ে ফেলেছে এমন ভাবাটা অবান্তর। বিশ্বাস না হলে তোমার বন্ধুকে প্রশ্ন করে দেখো, উওরটা সেই ঘুরেফিরে তোমার মতোই হবে। 
তাই, শুধু শুধু হতাশ হয়ে মুষড়ে না পড়ে অল্প যেইটুকু সময় বাকি আছে সে সময়টাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করো।  
পড়াশোনায় চিন্তায় পড়াশোনাকে ভুলে যাওয়া যাবে না: ইন্টারনেটে একটা বেশ পরিচিত মিম আছে যেখানে বলা হয়ে থাকে,
“পড়াশোনার চিন্তায় পড়াশোনা হচ্ছে না।” 
পরীক্ষা ঠিক আগমুহূর্তে আমাদের সবার এইরকমের একটা অনুভূতি হয়ে থাকে। প্রস্তুতি নেওয়া হয় নি; আহ! কী করলাম এটা; এখন আমার কী হবে; আমি তো ফেল করবো; কিচ্ছু তো পড়া হয় নি…… এবং আরো অনেক কিছু। এইসব দুশ্চিন্তা করতে গিয়ে আসল কাজখানাই আর হয় না। এসব দুশ্চিন্তা যাতে কখনোই তোমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নেবার ক্ষেত্রে কোনোরকম প্রতিবন্ধকতা না সৃষ্টি করে। যেটা হবার সেটা তো হয়েই গেছে। তাই সেটা নিয়ে ভাবতে গিয়ে আবারো সময় নষ্ট করাটা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাই, পরীক্ষার আগে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় নয়।
গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো চিহ্নিত করে রেখো পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোকে হাইলাইটার দিয়ে হাইলাইট করে রেখো। স্টিকি নোটসে প্রয়োজনীয় পয়েন্টগুলো লিখে বইয়ে আটকে দাও। রিভিশনের সময়ে ওই চিহ্নিত অংশগুলো আর স্টিকি নোটসের লেখাগুলো পড়ে ফেললেই পুরো বিষয়টা নিয়ে তোমার ধারণা নেওয়া হয়ে যাবে। 
এতে করে তোমার পরীক্ষার ঠিক আগে একদম শেষ সময়ে রিভিশন দেওয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ ও কম সময়সাপেক্ষ হবে। 
নতুনকে গুরুত্ব নয়: অনুচ্ছেদের নাম শুনে ভড়কে গেলে? আজীবন আমরা শুনে এসেছি পুরোনোকে সরিয়ে দিয়ে নতুনদের জায়গা করে দিতে হবে। আজ উল্টো কেন? কিন্তু পরীক্ষার ঠিক ঠিক আগমুহূর্তে করারও কিছু নেই। পরিক্ষার আগের সময়টায় অনেক অনেক নতুন নতুন বিষয়, অধ্যায়, তত্ত্ব, সূত্র, উদাহরণ দলবেঁধে সামনে পড়বে। খেয়াল রাখতে হবে নতুন এই জিনিসগুলো শিখতে গিয়ে যেন পুরোনো পড়াগুলো আবার ভুলে না যাওয়া হয়।
তাই, নতুন বিষয়গুলো শেখার পেছনে সময় কম দিয়ে নিজের জানা ও শেখা প্রয়োজনীয় পড়াগুলোই আবার রিভিশন দাও। শেখাটা পাকাপোক্ত করে ফেলো। 
ইউটিউব লেকচারের গতি বাড়িয়ে নাও: পরীক্ষা দ্বাড়প্রান্তে দণ্ডায়মান। অনেক পড়া, বোঝা, জানা ও শেখা বাকি। সময় অনেক কম। কিন্তু, ইউটিউবের ১ ঘন্টার বিশাল বিশাল লেকচারগুলো কীভাবে দেখে শেষ করা যাবে সব? এরও সমাধান আছে। ইউটিউব ভিডিওর স্পিড অপশনে গিয়ে ভিডিও দেখার গতি প্রয়োজনমতো বাড়িয়ে নেওয়া যায়। 
ধরো, তোমাকে একটি ১ ঘন্টার লেকচার দেখা প্রয়োজন। অথচ, হাতে সময় কম। তুমি চাইলেই এখন ১ ঘন্টার লেকচার ৪০ মিনিটে দেখে শেষ করতে পারবে।
সময় ফুরিয়ে গেছে অথচ প্রস্তুতি নেওয়া হয় নি, এটা আমাদের সবার জন্যেই সাধারণ একটি সমস্যা। এরকম পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখাটাই প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আশা করছি এই পরামর্শগুলো তোমাদের শেষ মুহূর্তে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অনেকাংশে সহায়তা করবে।
তাই, এই পরামর্শগুলো নিজেদের পরিচিতদের সাথে শেয়ার করো যাতে করে তারাও এরকম পরিস্থিতিতে উপকৃত হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ