সফলতার সিঁড়ি বেয়ে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা; তোমাকে প্রতিটি সিঁড়িতে উঠার আগেই উপযুক্ত সিদ্ধান্তটি নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাটা কিঞ্চিৎ কঠিন বটে। একথা আমাদের ক্ষেত্রে চরম সত্য যে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা প্রায়শই ব্যর্থ হই এবং হা-হুতাশ করে অস্থির হয়ে যাই। ক্রিকেট মাঠে যেমন ক্যাপ্টেনকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয় তেমনই ফুটবল মাঠে কোচকেও মাঝে মাঝে খেলার অবস্থা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তখন একটি ছোট ভুল সিদ্ধান্তও দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমাদের জীবনেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে শুরু করি। দেখা যায় আমাদের হাতে অপশন একের অধিক, তখন সঠিক সিদ্ধান্ত খুঁজতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা অত্যধিক। তখন মনে হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অঙ্কগুলো কষা সত্যিই অনেক কঠিন।
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতার সাথে এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে; তড়িঘড়ি করে কোন সিদ্ধান্তই ফলপ্রসূ হয় না।
কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার সময় বিভিন্ন দিক বিবেচনা করতে হয়। যেমন
·         অনিশ্চয়তা
·         জটিলতা
·         প্রচণ্ড ক্ষতির সম্ভাবনা
·         বিকল্প উপায়
যখন আমরা কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাই তখন উপরোক্ত জটিল সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়। সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করার জন্যই প্রথমে নিজের ভেতর একইসাথে সমস্যা-সমাধান এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল রপ্ত করতে হবে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক একটি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে পরের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো

যুগ্মিত তুলনা

অনেক সময়ই কোন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে আমাদের সামনে একের অধিক অপশন থাকে, তখন অপশনগুলো মূল্যায়ন না করেই হুট করেই একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, এই কাজটি একেবারেই অনুচিত। ধরা যাক, আমাদের হাতে দুটি অপশন আছে যার একটি সঠিক এবং অপরটি ভুল তাহলে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই সহজ হয়। কিন্তু যখন দুটি সিদ্ধান্তই সঠিক তখন কিন্তু অধিকতর সঠিক অপশনটি সিলেক্ট করাটা খুবই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়।
একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে আমাদের হাতে বিভিন্ন অপশনগুলোকে একটি টেবিল আকারে সাজিয়ে যেই অপশনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে সেই অনুসারে মূল্যায়ন করতে হবে কোন অপশনটি আগে প্রাধান্য পাবে।

অনুকূল একটি পরিবেশ তৈরি করা

কিছু কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া একটু জটিল হয়ে যায় যখন দেখি আমাদের আশেপাশের কিছু মানুষ এই সিদ্ধান্তকে অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখছে কিংবা কোনভাবেই সাপোর্ট করছে না; তখন আশেপাশের পরিবেশ অনেকটাই বিরূপ আচরণ করতে শুরু করে। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে মনে হচ্ছে এই সিদ্ধান্তটিই আমার জন্য যথার্থ। তখন নিজের উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে যে আমার এই সিদ্ধান্তটিই ঠিক।
প্রথমবার ভার্সিটি এক্সাম দিয়ে ব্যর্থ হওয়ার মানেই কিন্তু এটা না যে আরেকবার ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। স্বপ্ন আমার একটি ভালো পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ার, আশেপাশের মানুষ কী বলছে তাতে কান না দিয়ে নিজের কাজটি সঠিকভাবে করে যাওয়াই তখন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত।
আমাদের আশেপাশে বহু উদাহরণ আছে যারা চাকরির অফার ফিরিয়ে দিয়ে এক বছর-দুই বছর অপচয় করেও বিসিএস দিয়ে চান্স পেয়েছে। তাদেরকে নিশ্চয়ই এই সময়টাতে বহু কটু কথা শুনতে হয়েছে। অথচ নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কিন্তু তারা সঠিক সিদ্ধান্তটিই গ্রহণ করেছিলো।

লক্ষ্যের দিকে জোরদার নজর রাখা

একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে সর্বপ্রথম নিশ্চিত করতে হবে আমাদের অবস্থা সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণরূপে অবগত কিনা। বিভিন্ন দিক থেকে চিন্তা করে দেখতে হবে সিদ্ধান্তটি যথার্থ কিনা এবং খেয়াল রাখতে হবে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস গেলো কিনা। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস হয়ে গেলে কিন্তু এর ফলাফল ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণ

যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করছি সেটা কি আমার জন্য লাভজনক হবে নাকি ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। আমরা সবাই নোকিয়া মোবাইল কোম্পানীর আত্মকাহিনী সম্পর্কে অবগত। এক সময়ের নাম্বার ওয়ান মোবাইল কোম্পানি একটা মাত্র বোকামীর জন্য আজও পস্তাচ্ছে।
যত বেশি সিদ্ধান্তটির এপিঠ-ওপিঠ জানা যাবে ততই মঙ্গল
এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের আগমনের পর যখন সব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমকে ছাড়িয়ে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, তখনও নোকিয়া কোম্পানি এন্ড্রয়েডকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভেবেছিলো সিম্বিয়ানেই মার্কেট ধরে রাখতে পারবে। কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো তা আমরা এখন সবাই জানি।

৮০/২০ সূত্র

এই সূত্রটি সফল হওয়ার জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ এক ভূমিকা পালন করে। সূত্রটি হলো – “অল্প পুঁজি এবং অল্প প্রচেষ্টায় অধিক পরিমাণে ফায়দা তুলে নেওয়া।”  ধরা যাক, এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি যেটা আমার জীবনের লক্ষ্যের সাথে মিলে যাচ্ছে, সুতরাং আমি নিঃসন্দেহে খুব আনন্দের সাথে এই টাস্কটি সম্পন্ন করবো। দেখা যাবে আমি যদি এই টাস্কের ২০% সম্পন্ন করার জন্য মনোযোগ দেই তখন আপনা আপনিই বাকি ৮০% সম্পন্ন হয়ে যাবে।

সঠিক অপশনটি সিলেক্ট করা

সবগুলো অপশন মূল্যায়ন করা হয়ে গেলে এই স্টেপে এসে আমরা আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তটি সহজেই সিলেক্ট করতে পারবো। যে অপশনটি অন্য সব অপশন থেকে শ্রেষ্ঠতর সেই অপশন গ্রহণ করাই হবে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া

সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর গুরুজন কিংবা এই সমস্যা থেকে উত্তীর্ণ হওয়া মানুষদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানতে হবে। তাঁদের থেকে অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা যাবে। যত বেশি সিদ্ধান্তটির এপিঠ-ওপিঠ জানা যাবে ততই মঙ্গল।
সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারা অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা ক্যারিয়ার গঠনের জন্য অপরিহার্য। একটি ভুল সিদ্ধান্তই হয়তো সারাজীবনের জন্য কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অবশ্যই এখন থেকে সফলতার সিঁড়ি বেয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রতিটি পদক্ষেপেই যেন সঙ্গী হয় এক একটি সঠিক সিদ্ধান্ত।