ছোটবেলায় অনেকেই শুনে এসেছে, “ফার্স্ট বয়/গার্ল এত ভাল ফলাফল করতে পারলে তুমি কেন পারছো না?”
সব মানুষের জন্যই প্রতিটি দিন চব্বিশ ঘণ্টার। সূর্য সবার জন্যই একই সময় ওঠে এবং একই সময় অস্ত যায়। মাঝখানের সময়টুকু কে কীভাবে কাজে লাগায় সেটি দিয়েই তৈরি হয় সাফল্যের তারতম্য।
আমাদের আগের প্রজন্মেও মনে করা হতো কাজের সময় হচ্ছে কেবল অফিসের সময়, দিনশেষের সময়টুকু বিনোদনের-বিশ্রামের। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই ব্যস্ত আর যান্ত্রিক পৃথিবীতে দিন-রাতের সীমারেখা বলে কিছু নেই এখন। মানুষ কাজ করে চলে নিরলস ২৪/৭। অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে জানার, সফল মানুষেরা কীভাবে দিনশেষের সময়টুকু কাটান।
চলো, জেনে নেওয়া যাক এমনই কিছু বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তির প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রার অভ্যাস।
মার্ক জাকারবার্গ
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ৩৩ বছর বয়সী মার্ক জাকারবার্গকে সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় বিশ্বজুড়ে নানা রকম প্রকল্প-বৈঠকে। এত কর্মব্যস্ততার মাঝেও জাকারবার্গ তাঁর এক বছর বয়সী শিশু কন্যা ম্যাক্সকে নিয়ে (ইহুদী নিয়মের ‘মী শেবিরাচ’) প্রার্থনায় সময় কাটান। রাতের সময়টুকু কাজকে ছুটি জানিয়ে স্ত্রী প্রিসিলা এবং কন্যা ম্যাক্সের সাথেই একান্তে কাটান তিনি।
রিচার্ড ব্র্যানসন
ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন কখনোই প্রথাগত নিয়মকানুনে বিশ্বাসী নন। সবসময়েই ভিন্ন পথে হাঁটা এই মানুষটির প্রতিষ্ঠিত ভার্জিন গ্রুপ বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৪০০টিরও বেশি কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে।
৬৭ বছর বয়সী স্যার রিচার্ড প্রতিদিন রাতের খাবার সেরে পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় কাটান। ব্যক্তিজীবনে গল্পগুজবে সবাইকে মাতিয়ে রাখা তাঁর অভ্যাস। তাঁর মতে, “এরকম গল্পগুজবের মাধ্যমেই
হরেকরকম মজার আইডিয়া তৈরি হয় যেগুলো আমরা কোম্পানির কর্মপরিকল্পনায় কাজে লাগাই”।
সত্তরের দোরগোড়ায় পা দিতে যাওয়া স্যার রিচার্ড সাধারণত রাতে ৬ ঘণ্টা ঘুমান। তার আগে খাওয়া-দাওয়া আর গল্প করে সময় কাটান। গল্পগুজব শেষে রাত ১১ টার মধ্যে ঘুমাতে যান।
বিল গেটস
মাইক্রোসফটের কল্যাণে অনেক বছর ধরেই বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। অনেকেরই মনে জিজ্ঞাসা তিনি অবসরের সময়টুকু কীভাবে কাটান?
অবাক হয়ে যাবে উত্তরটি শুনে। তিনি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে রাতের খাবারের পর ফেলে রাখা ডিশগুলো নিজ হাতে ধুয়ে রাখেন! কাজটি তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই করে থাকেন। এছাড়াও তিনি প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে অনেকক্ষণ বই পড়েন। তাঁর মতে, এটি তাঁকে ঘুমাতে সাহায্য করে। বিল গেটস প্রতি বছর গড়পড়তা ৫০টিরও বেশি বই পড়েন।
একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন সুপার পাওয়ার পেলে তিনি সবচেয়ে খুশি হবেন? অদৃশ্য হওয়া? আকাশে উড়তে পারা? টাইম ট্রাভেল? বিল গেটসের উত্তর ছিল- আরো দ্রুত বই পড়তে পারা! সন্দেহ নেই বই পাগল মানুষটি রাতের বড় একটি সময় পার করেন বই পড়ে!
ভিন্স ম্যাকম্যান
“রেসলিং” শব্দটি শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথমে চলে আসে “WWE” এর নাম। WWE এর মালিক ভিনসেন্ট কেনেডি ম্যাকম্যান জুনিয়র নিজেও তাঁর কোম্পানিতে কাজ করা কুস্তিগীরদের চেয়ে কম যান না!
কাজের অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে চলেন সবার মাঝে
বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি কাজ করার পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছেন। ৭২ বছর বয়সী ম্যাকম্যান অফিসে ঢোকেন সবার আগে, বের হন সবার পরে। সারাদিনে তিন ঘণ্টার বেশি ঘুমান না কখনো। এখনও কোম্পানির সব খুঁটিনাটি নখদর্পণে রাখেন তিনি, কাজের অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে চলেন সবার মাঝে।মাঝরাতে জিমে যান ব্যায়াম করতে, এই বৃদ্ধ বয়সেও পেশিবহুল সিক্স প্যাক ফিগার রয়েছে তাঁর।
ইন্দ্রা নুয়ী
বিশ্ববিখ্যাত খাদ্য ও পানীয় কোম্পানি
PepsiCo এর CEO ইন্দ্রা নুয়ী সবসময় পরিচিত কঠোর পরিশ্রমী জীবনযাপনের জন্য। ভারত থেকে তিনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের Yale বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলেন, তখন খরচ যোগানোর জন্য রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকরি করতেন পড়ালেখার পাশাপাশি।
এখন অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অভ্যাসে কোন পরিবর্তন আসেনি। নিজের সন্তানদেরও সেভাবেই বড় করেছেন, আলসেমি শব্দটির কোন অস্তিত্ব নেই তাঁর অভিধানে। এখনও কাজ করতে করতে প্রায়ই ঘুমের কথা ভুলে যান নুয়ী!
পিচাই সুন্দররাজন
পিচাই সুন্দররাজন সবার কাছে ‘সুন্দর পিচাই’ নামেই বেশি পরিচিত। ২০১৫ সালের ১০ আগস্ট তিনি গুগলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঘোষিত হন। প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের মালিক পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর এই মানুষটি ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সাদাসিধে। প্রতিদিন অফিসের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে তিনি নিজেই ছেলেমেয়েদের ঘুম পাড়িয়ে দেন এবং পরিবারের সাথে সময় কাটান।
অপরাহ উইনফ্রে
‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’ দিয়ে সারা পৃথিবীকে মাতিয়ে রাখা অপরাহ উইনফ্রে সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ধ্যান করেন। একান্তে নিরিবিলিতে এই ধ্যানের মাধ্যমে তিনি সারাদিনের ক্লান্তি খুব সহজেই ঝেড়ে ফেলতে পারেন। এছাড়াও তিনি নিয়মিত মেডিটেশন করে থাকেন। দিনশেষে কাজের ধকলের পর রাতের সময়টুকু তিনি একান্তে নিরিবিলিতে কাটাতেই পছন্দ করেন।
মারিসা মেয়ার
“Yahoo!” এর সাবেক CEO মারিসা মেয়ার এক যুগেরও বেশি সময় গুগলে কাজ করেছেন। সেখানে থাকতে তিনি প্রতিদিন প্রায় ১৯ ঘণ্টা অফিসে কাজ করতেন! তাঁর দিন-রাত আলাদা বলে কিছু ছিল না। কাজের ফাঁকে ফাঁকে খুব অল্প সময় ঘুমিয়ে নিতেন তিনি, তাতেই ক্লান্তিকে ফাঁকি দিয়ে নতুন করে কাজের প্রেরণা ফিরে পেতেন তিনি। এ কঠোর পরিশ্রমের প্রতিদানও পেয়ে চলেছেন তিনি। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সেই ৫৪০ মিলিয়ন ডলারের মালিক তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ