সাফল্য! প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। সফলতা আমরা অর্জন করতে চাই সবচেয়ে কম সময়ে। কম বয়সে সফল হওয়া ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ কিংবা ১২ বছর বয়সী IBM Watson প্রোগ্রামার তানমায় বাকশিকে দেখে যেমন অনেকে পায় অনুপ্রেরণা আবার তেমনি তাদের সাথে তুলনা করেকী করলাম জীবনেএটা ভেবে অনেকে ডুবে যায় হতাশায়।
কিন্তু পৃথিবীতে যেমন অল্প বয়সেই সফল হওয়া ব্যক্তিত্ব আছেন তেমনি আছেন অনেক অনেক ব্যক্তিত্ব যাঁরা সাফল্য পেয়েছেন জীবনের অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয়ার পরে। তাঁদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির সামনে বয়স কোনো ব্যাপারই ছিল না।
এমনই জন হার না মানা সফল মানুষের গল্প আমরা শুনবো এখন-

১। স্ট্যান লি:

সুপারহিরো বলতেই আমাদের চোখের সামনে যা ভেসে ওঠে তার অধিকাংশের স্রষ্টা স্ট্যান লি। তাঁর গড়া স্পাইডারম্যান, এক্স-ম্যান ইত্যাদি চরিত্রই গত অর্ধ-শতাব্দী ধরে মার্ভেল কমিকসকে রেখেছে কমিকস জগতের শীর্ষে। শুধু কমিকসই নয়, গত কয়েক বছর ধরে হলিউডের পর্দায় যেন রাজত্ব করছে মার্ভেলের চলচ্চিত্রগুলো।
আয়রন-ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা কিংবা গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সির ভক্ত এখন ছোট-বড় সব বয়সের দর্শক। মার্ভেল কমিকসের প্রাক্তন এই চেয়ারম্যানকে কিন্তু সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। তাঁর প্রথম সফল কমিক্সFantastic Fourপ্রকাশিত হয়েছিল তাঁর ৩৯ তম জন্মদিনের ঠিক কিছু সময় আগে।

২। হেনরি ফোর্ড:

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প উদ্যোক্তাদের একজন হেনরি ফোর্ড। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানিফোর্ড মোটর লিমিটেডএর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তাঁর স্বপ্নের এই প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পথে ফোর্ড কিন্তু হোঁচট কম খান নি। কিন্তু সেগুলো তাঁকে দমাতে পারে নি।
অবশেষে ১৯০৮ সালে ৪৫ বছর বয়সে তিনি বিশ্বকে পরিচয়  করান বিখ্যাত Ford Model T- সাথে যা বিপ্লব ঘটায় সারাবিশ্বের যাতায়াত ব্যবস্থা গাড়ি শিল্পে।

৩। তাইকিচিরো মোরি:

যেকোনো বয়সেই যে নতুন কিছু শুরু করা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ তাইকিচিরো মোরি। ৫১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন প্রভাষক। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেনমোরি বিল্ডিং কোম্পানি যা পরবর্তীতে রূপ নেয় জাপানের অন্যতম বৃহৎ রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে এবং ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালে মোরি বনে যান বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি।

৪। চার্লস ডারউইন:

বিজ্ঞানের জগতে চার্লস ডারউইন চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তাঁরথিওরি অফ ইভোলিউশনএর জন্য। এজন্য তাঁকেবিবর্তনবাদের জনক বলা হয়। মানুষের চিন্তার জগত বদলে দেয়া এই থিওরির কথা তিনি প্রথম বলেছিলেনOn the Origin of Species” গ্রন্থে। ১৮৫৯ সালে গ্রন্থটি যখন প্রকাশিত হয় ডারউইন তখন পার করে ফেলেছিলেন জীবনের হাফ-সেঞ্চুরি।

৫। হারল্যান্ড স্যান্ডারস:

হারল্যান্ড স্যান্ডারস বা কর্নেল স্যান্ডারস অমর হয়ে আছেন তাঁরকেন্টাকি ফ্রাইড চিকেনবাকেএফসিফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য। বিশ্বের ২য় বৃহত্তম ফুড চেইন কেএফসির রয়েছে প্রায় ২০,০০০ আউটলেট, সারাবিশ্বের ১২৩টিরও বেশি দেশে।
জীবনে কখনো পিছপা হননি নতুন কিছু চেষ্টা করতে
এই মানুষটির সারা জীবন কিন্তু ছিল ব্যর্থতায় ভরা। এমনকি হতাশায় ডুবে আত্মহত্যাও করতে চেয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ১৯৫২ সালে ৬২ বছর বয়সে তিনি চালু করেন সর্বপ্রথমকেন্টাকি ফ্রাইড চিকেনফ্র্যাঞ্চাইজি। বাকিটা ইতিহাস!
এই মানুষগুলো জীবনের ব্যর্থতায় কখনো ভাবেননিজীবন তো শেষই হয়ে গেল জীবনে কখনো পিছপা হননি নতুন কিছু চেষ্টা করতে। এজন্যই তাঁদের জীবনে সাফল্যের সূর্যের দেখা মিলেছে দীর্ঘ অমাবস্যার পর। জাপানি একটি প্রবাদ রয়েছে – Fall down seven times, get up eight আমাদের জীবন আসলে অনেক বড়। যেকোনো সময়ে, যেকোনো বয়সে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই আপনি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে। শুধু বিশ্বাস রাখুন নিজের ওপর। অনেক অনেক শুভকামনা