আফ্রিকা: এক অন্য রকমের সভ্যতা!


সভ্যতাশব্দটা শুনলেই আমাদের মনে সবার আগে আসে আমেরিকা কিংবা চীনের মত দেশের নাম আর এর বিপরীত কোন শব্দ শুনলেই সবার আগেই আমরা আফ্রিকার কথা চিন্তা করে ফেলি। অনেক আগে একটা ভিডিও দেখেছিলাম যেখানে কিছু ছোট বাচ্চাকে একটা ছবি দেখানো হয়। ছবিটাতে তিনজন বাচ্চা রয়েছে, দুইজন শ্বেতাঙ্গ এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ। ছবিটা দেখিয়ে বাচ্চাগুলোকে প্রশ্ন করা হয় যে এখানে সবচেয়ে দুষ্ট বাচ্চাটা কে?
আশ্চর্যজনকভাবে, পরীক্ষায় অংশ নেয়া শ্বেতাঙ্গ বাচ্চাগুলোর সাথে সাথে কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাগুলোও সেই ছবির কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাটির দিকে ইঙ্গিত করে। কারণটা খুবই সিম্পল, ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাইন্ডসেট করে দেয়া যে, আফ্রিকানরা হচ্ছে সবচেয়ে অসভ্য জাতি। আচ্ছা, সভ্যতার সংজ্ঞাটা আসলে কী? ফর্মাল ড্রেসআপ, হ্যান্ডশেক, পাশ্চাত্য খাবারই কি সভ্যতা? তাই যদি হয়, তবে চলুনতো দেখে আসি সবচেয়ে অসভ্য জাতি হিসেবে আখ্যায়িত আফ্রিকানরা সভ্যতাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করে!

উবান্টু

একবার এক ফটো সাংবাদিক আফ্রিকায় একদল ছেলের সামনে এক ঝাঁক আম রেখে বলল, অন্যদিক থেকে দৌড়ে আসতে। দৌড়ে যে সবার আগে আসবে, সে সবচেয়ে বড় আমটা পাবে। কিন্তু ছেলেগুলো করল কী! দিপু নাম্বার টু এর মত একসাথে দৌড়ে আসল। সাংবাদিক হতচকিত হয়ে আবার দৌড়ে আসতে বলল। আবার একই ঘটনা। এমন কয়েকবার হওয়ার পর সাংবাদিক এর কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, ‘উবান্টু উবান্টু একটি নিউনি বান্টু ভাষার শব্দ। এর মানে হচ্ছেমানবতার জন্য একতা

আজব বিচার ব্যবস্থা

আফ্রিকার দূরের এক গ্রামে যখন কেউ কোন অপরাধ করে, তখন তাকে এক আজব বিচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অপরাধীকে একটা খোলা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে ঘিরে রাখে গ্রামের বাকি সবাই। গ্রামবাসী এক এক করে সেই অপরাধীর আজ পর্যন্ত করা সব ভাল কাজগুলোর কথা বলতে থাকে। এরপর সব শুনে ঠিক করা হয় যে তাকে কী শাস্তি দেয়া হবে।

দাসানাখের রিসাইক্লিং

আফ্রিকায় দাসানাখ নামক এক উপজাতি রয়েছে যারা তাদের রিসাইক্লিং এর জন্য খ্যাত। এই উপজাতি তাদের বোতলের ক্যাপগুলোকে একত্র করে এবং তা দিয়ে তৈরি করে রঙ বেরঙের নজরকাড়া সব গহনা।

পরিশ্রম  

লেখাপড়া, তথ্য-প্রযুক্তি সব দিক দিয়েই আফ্রিকা অন্যান্য দেশের থেকে অনেক পেছনে। এছাড়া মহাদেশের আবহাওয়া জলবায়ুও টিকে থাকার জন্য কষ্টকর যার কারণে অনেক কম বয়স থেকেই আফ্রিকানদের টিকে থাকার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন কঠিন নিয়ম-কানুনের কারণে ছোটবেলা থেকেই তারা অনেক সহনশীল হয়ে বড় হয়।
আফ্রিকানরা নিজেদের যেকোনো কাজ নিজেরা করে

সংস্কৃতি রক্ষা  

বর্তমান বিশ্বে খুব শোনা যায় এমন একটা শব্দ হচ্ছে  ‘কালচারাল এ্যাগ্রেশন অর্থাৎ নিজ দেশের সংস্কৃতির সাথে অন্য দেশের সংস্কৃতির মিশ্রণ করে একরকমের জগাখিচুড়ি পাকিয়ে ফেলা। আফ্রিকানদের অনেক পুরনো নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে যা অন্যান্য দেশের থেকে অনেক আলাদা, তাদের পোশাক, আচার-অনুষ্ঠান, চলা-ফেরা, এক কথায় সবকিছু।
খানে ৩০০০ এর উপরে উপজাতি রয়েছে। যাদের নিজস্ব ২০০০ এর উপরে ভাষা এবং সংস্কৃতি রয়েছে। এত বছর পেরিয়ে গেলেও অন্যান্য দেশের মত কোনো প্রকারকালচারাল এ্যাগ্রেশনকিন্তু আফ্রিকার সংস্কৃতিকে স্পর্শ করতে পারেনি।  

নিজের কাজ নিজে করা

যেই বয়সেরই হোক না কেন, আফ্রিকানরা নিজেদের যেকোন কাজ নিজেরাই করে। এমনকি, তারা যে বৈচিত্র্যময় পোশাক এবং গহনা পরে, তাও তারা নিজ হাতে তৈরি করে।
 You must judge a man by the work of his hands.

বন্ধুত্বপূর্ণতা  

আফ্রিকানরা স্বজাতি এবং পর্যটক সবার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে যার কারণে পর্যটকরাও আফ্রিকার প্রতি উৎসাহ দেখায়। তারা পর্যটকদের শুধু একজন পর্যটক হিসেবেই নয় বরং একজন বন্ধু হিসেবে আফ্রিকায় আমন্ত্রণ জানায়।
A man who pays respect to the great paves the way for his own greatness


ইতিবাচক চিন্তাধারা

“Do not look where you fell, but where you slipped.”
“If you don’t stand for something, you will fall for something.”
“The lizard that jumped from the high Iroko tree to the ground said he would praise himself if no one else did.”
“The sun will shine on those who stand before it shines on those who kneel under them.”
“When a man says yes, his chi (personal god) says yes also.”
এরকম কিছু আফ্রিকান প্রবাদ থেকে আফ্রিকানদের ইতিবাচক চিন্তাধারার পরিচয় পাওয়া যায়।
এরপরও কি তুমি আফ্রিকানদের সভ্য জাতি বলে আখ্যায়িত করবে না? অনেক তো ইউরোপিয়ানদের মত সভ্য হওয়া গেল, এবার এসো না একটু আফ্রিকানদের মত সভ্য হই!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ