শিরোনামটা দেখেই হয়ত ধরে ফেলেছেন যে এখানে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু বলতে যাচ্ছি। ঠিক তাই!
তবে শারীরিক না, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সিংহভাগই ভোগেন ‘বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোম’ নামের এক মানসিক সমস্যায়। আপনার অজান্তে আপনিও হয়ত সেই সমস্যাতেই জর্জরিত হয়ে কাটাচ্ছেন আপনার জীবন।
কি এই বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোম?
বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোম হচ্ছে একধরণের মাইন্ডসেট। আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী কে? তাহলে আপনি হয়ত এক মুহুর্তও চিন্তা না করে হাতির নাম নিয়ে নিবেন। অথচ আপনি জানেন কি, পৃথিবীর অনেক হাতির তার শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই? সার্কাসের হাতি কিংবা পোষা হাতিকে ছোটবেলা থেকে একটা শক্ত দড়ি অথবা শিকল দিয়ে কোনো কিছুর সাথে আটকে রাখা হয়।বাচ্চা হাতিটা অনেক চেষ্টা করে সেটি থেকে মুক্ত হওয়ার কিন্তু অক্ষমতার জন্য সে সফল হয় না। বাচ্চা হাতিটা মুক্ত হতে পারে না। এরপরেও সে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই থাকে এবং এক সময় গিয়ে যখন বুঝতে পারে যে নাহ! এখান থেকে মুক্ত হওয়ার ক্ষমতা তার নেই তখন সে সারাজীবনের মত হাল ছেড়ে দেয়। বাচ্চা হাতিটা বড় হয়, তার এত শক্তি হয় তখন যে, ঐ দড়ি কিংবা শিকল কি, চাইলে সে তাঁর আশেপাশের সবকিছুকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে কিন্তু হাতিটা তা জানে না। সে জানে যে এই দড়ি থেকে মুক্ত হবার ক্ষমতা তার নেই!
কি? খারাপ লাগছে হাতিটার কথা ভেবে? এত শক্তিশালী একটা প্রাণী যাকে পরাজিত করার সামর্থ্য একদল মানুষেরও নেই সেখানে একটা ছোট্ট শেকল কিংবা দড়ি তাকে মানসিক ভাবে পরাজিত করে দিল? কিন্তু আমি যদি বলি যে, ঐ হাতি আর আপনার মাঝে বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই?
ছোটবেলা থেকেই আমরা যেই শব্দটা সবচেয়ে বেশি শুনি তা হচ্ছে, ‘না’। তুমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, তুমি এটা করতে পারবে না। তুমি দেখতে ভাল না, তুমি ওটা করতে পারবে না। তোমার এই নিয়ে অভিজ্ঞতা নেই, তুমি পারবে না। তুমি ভাল ছাত্র না, তোমায় দিয়ে হবে না। আরো কত রকমের না! না একটা এক অক্ষরের শব্দ হলেও আমাদের জীবনে এর প্রভাবটা অনেক বেশি।
Your attempt may fail but never attempt to
fail.
সুন্দর গান গাইতে পারে এমন একটা মানুষকে যদি বারবার বলে যাওয়া হয় যে সে গান গাইতে পারে না তাহলে এক সময় গিয়ে সেই বাচ্চা হাতিটার মত সেও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, গান গাওয়া তার সাধ্যে নেই। এভাবে ছোটবেলা থেকে আমরা যখন আমাদের অক্ষমতা দেখতে দেখতে বড় হই, তখন এক সময় গিয়ে, যখন চেষ্টা করলেই হয়ত সেই অক্ষমতাকে দূর করে দিতে পারব আমরা, তখনই ‘পারব না আর’ বলে হাল ছেড়ে দেই আর অজান্তেই নিজের ভেতর জায়গা করে দেই বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোমের!কিভাবে ‘বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোম’ দূর করা যায়?
বিষয়টা বেশ সহজ। জীবনটা আপনার নিজের, আপনি জানেন আপনি কি পারেন কি পারেন না। তবে কেন অন্যের কথায় থেমে থাকবেন? কেউ উপদেশ দিয়ে তা শুনুন, ভাল লাগলে কাজে লাগাবেন নয়ত সুন্দর করে হেসে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আরেক কান দিয়ে বের করে দিন।তবে বেশিরভাগ সময় যেটা হয় যে, অন্য কেউ না বরং আমরা নিজেরাই নিজেদের ভেতরে বেবি এলিফ্যান্টের জন্ম দিয়ে ফেলি। এজন্য ‘নেতিবাচক চিন্তা’ কিংবা ‘অতিরিক্ত চিন্তা’ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। এই দুইটা জিনিস কখনো কোন কিছুর সমাধান দেয় না বরং অনেক সহজ জিনিসকে জটিল করে ফেলে।
পৃথিবীর সফল মানুষগুলো কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে অনেকবার, সম্মুখীন হয়েছে অনেক রকম ‘না’ এর। কিন্তু এতে করে তারা যদি বেবি এলিফ্যান্ট সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে যেত তবে আজকের পৃথিবীটা হয়তো এত এগিয়ে যেত না!
“Choose not to accept the false boundaries and limitations created by the past.”
0 মন্তব্যসমূহ