পাঁচটি ভীষণ মজার Psychological tricks!


মানুষ বরাবরই অভ্যাসের দাস। ঘুম পেলে হাই তোলা, চোখের কাছে ধুলোবালি উড়ে আসলে অজান্তেই চোখের পাতা কুঁচকে ফেলা, অন্ধকারকে ভয় পাওয়াসময়ের বিবর্তনে হাজার বছর ধরে গড়ে ওঠা এমন অসংখ্য অভ্যাস আমাদের অস্থি-মজ্জায় একদম মিশে গেছে। অবচেতনের এই বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই তেমন জানিনা। এগুলো জানা থাকলে কিন্তু জীবনের নানা ক্ষেত্রে অনেক মজার মজার কৌশল ব্যবহার করতে পারবে তুমি! চলো, আজ দেখে নেই এমনই পাঁচটি মজার সাইকোলজিক্যাল ট্রিকস!

১। হাতি থেকে ইঁদুর

সেই যে একটা কথা আছে, তোমার যদি ইঁদুর দরকার হয় তবে দরাদরি শুরু করো হাতি চেয়ে! প্রথমে হাতি, তারপর ঘোড়া, তারপর গরু, ছাগল, মুরগিঅপর পক্ষ আর কত না বলবে? ইঁদুরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঠিক রাজি হয়ে যাবে! এই কৌশলটা কিন্তু সবখানেই খুব লেগে যায় কাজে। মনে করো তোমার একটা মোবাইলের প্রয়োজন। খুব কাঁচুমাচু মুখ করে গুরুজনের কাছে আবদার ধরলে একটা মোবাইল কিনে দিতে, ৯০% সম্ভাবনা মোবাইলের বদলে মুড়ি জুটবে! কিন্তু যদি শুরু দাও একটা কম্পিউটার চেয়ে, দুপক্ষে টানাটানি করতে করতে হয়তো একটা মোবাইল কেনাতে রাজিও করে ফেলতে পারো!
এজন্যই মার্কেটে দোকানীরা ফট করে তিন-চার গুণ বেশি দাম চেয়ে বসে, যেন অনেকক্ষণ দরাদরি করে দাম অর্ধেকে নামিয়ে এনে তোমার মনে হয়বেশ জিতেছি!” কিন্তু আসলে যে কে জিতেছে তা তো বুঝতেই পারছো! খুব সহজ কিন্তু চতুর এই কৌশলটি কায়দামত প্রয়োগ করতে পারলে কাজ আদায় অনেক সহজ হয়ে যাবে তোমার জন্য সবখানে!

২। আয়নাবাজি

তুমি কি জানো আমাদের অবচেতন মনেমিরর রিফ্লেক্সবলে একটা ব্যাপার আছে যে কারণে তোমার সাথে কেউ যেভাবে ব্যবহার করে তুমিও অবচেতনেই পাল্টা তেমন ব্যবহারই ফিরিয়ে দাও! এজন্যই খিটখিটে মেজাজের কাউকে দেখলে আমাদেরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, শিশুদের ফোকলা দাঁতের হাসি দেখলে আবার মনটা ভাল হয়ে যায় নিমেষেই! কারণেই কাউকে হাই তুলতে দেখলে আমাদেরও হাই পেতে থাকে, আবার কেউ খিলখিল করে হাসছে দেখলে অজান্তেই হাসি পায় ভীষণ! এই যেমিরর রিফ্লেক্সেরআয়নাবাজির ব্যাপারটা জেনে গেলে তুমি, সুতরাং আজ থেকে তোমার প্রতিক্রিয়া অন্যদের ব্যবহারের উপর নির্ভর করবে না।
কেউ অসৌজন্যমূলক আচরণ করলো দেখে তুমিও তার পর্যায়ে নেমে আসবে তা তো হতে পারে না। বিনয় আর সৌজন্য সব সময়ের জন্য নিয়ে এসো আচরণে, দেখবে পৃথিবীও তোমার সাথে ভীষণ বিনয়ী আচরণ করছে! একটা গোমড়ামুখো মানুষের সাথে কয়েকদিন হেসে হেসে কথা বলো তুমি, দেখবে মানুষটা বেশিদিন তোমার সামনে মুখ গোমড়া করে রাখতে পারবে না! এখানেই তো আয়নাবাজির বাজিমাত!

৩। পাঁচ মিনিটের কাজ

ছুটির দিন হঠাৎ খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল তোমার। আকাশে আলো ফোটেনি এখনও, ভোরের পাখির ডাকে আবছায়া মায়াবী এক পরিবেশ। তোমার একটা চ্যাপ্টার পড়া দরকার, কিন্তু বিছানা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালিয়ে পড়তে বসার কথা চিন্তা করেই তোমার গায়ে জ্বর চলে আসলো! আর দশটা মিনিট ঘুমিয়ে নেই, ততক্ষণে সূর্য উঠে ঝলমলে আলোয় ঘর ভরে যাবে, বেশ একটা পড়ার পরিবেশ তৈরি হবে- এই ভেবে তুমি বিছানায় পাশ ফিরলে, এবং ঘুম থেকে উঠে আবিষ্কার করলে সকাল দশটা বেজে গেছে! এমন ঘটনা যে কতবার হয়েছে সবার জীবনে হিসেব নেই!
আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আজ থেকে আর হবে না এমন! কারণ এখন থেকে কোন কাজ ভীষণ জরুরী কিন্তু করতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না- এমন হলে সহজ সমাধান- যত বিরক্তই লাগুক পাঁচ মিনিট সময় দাও কাজটা নিয়ে। বেশি না, মাত্র পাঁচটা মিনিট। দেখবে ম্যাজিকের মত কাজ হবে! এই পদ্ধতিটা কেন এত কাজের জানো? মস্তিষ্ক সবসময় চায় তোমাকে আরামে রাখতে, এজন্য সে তোমাকে ঘুম ছেড়ে বিছানা থেকে উঠতে দিতে নারাজ। কিন্তু তুমি যখন সাহস করে একবার উঠেই পড়ো কাজ করতে, তখন তার প্রতিরোধটা খড়কুটোর মত ভেসে যায় পানিতে। তাই পাঁচ মিনিটের জন্য কাজ শুরু করে দিয়ে দেখবে কখন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে টেরই পাওনি!

৪। রাগে পানি ঢেলে দাও!

তোমার খুব শিগগির কোথাও যাওয়া প্রয়োজন, রাস্তায় যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না, অনেক খুঁজে একটা রিকশা পাওয়া গেল, কিন্তু রিকশাওয়ালা পায়ের উপর পা তুলে কান চুলকাতে চুলকাতে এমন অসম্ভব বেশি একটা ভাড়া হাঁকলো যে রাগে তোমার মাথার তালু জ্বলে গেলো!
বিনয় আর সৌজন্য সব সময়ের জন্য নিয়ে এসো আচরণে
ফাইজলামি পাইসেন! এখান থেকে এখানে ভাড়া কত জানেন না?”
গজগজ করতে করতে বেশ একটা তর্কাতর্কি বেঁধে গেল এবং সেটা দেখার জন্য কিছু মানুষ জমে গেল রাস্তায়! কিছুক্ষণ পর তুমি আবিষ্কার করলে রিকশাওয়ালার সাথে ঝগড়া করে মেজাজটা তিতকুটে হয়ে আছে, মাঝখান থেকে খামাখা অনেকগুলো সময় নষ্ট হয়েছে, এবং সবেধন রিকশাটাও হাতছাড়া হয়ে গেছে! অথচ একটু অন্যরকম ভাবে যদি বলতে-
মামা আপনি যাওয়া আসা দুটোর ভাড়াই হিসেব করে ফেলেছেন বুঝি? আমি তো কেবল যাবো!” আমি বাজি ধরে বলতে পারি রিকশাওয়ালা ফিক করে হেসে দিয়ে মোটামুটি দস্তুর একটা ভাড়ায় রাজি হয়ে যেত! হাসিমুখের একটা কথায় ভোজবাজির মত পাল্টে গেল সব! রাস্তা-ঘাটে নানা কারণে আমাদের অনেক মেজাজ খারাপ হয়, সেটা নিয়ে রাগারাগি না করে ঠাণ্ডা মাথায় বুদ্ধি দিয়ে মোকাবিলা করতে জানলেই কিন্তু সমস্যা অর্ধেক কমে যায়!

৫। ইন্টারভিউ যখন ঘরোয়া আড্ডা

ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে হাত পা কাঁপাকাঁপি, কথা বলতে গিয়ে তোতলাতে থাকা- এমন অভিজ্ঞতা আমাদের প্রায় সবার জীবনেই কমবেশি রয়েছে! কী লজ্জার একটা ব্যাপার! কারণটা কি বলতে পারো? আসলে আমরা নিজেকে ফিটফাট স্মার্ট দেখানোর জন্য এত মাথা ঘামাতে থাকি যে বোর্ডে গিয়ে স্বাভাবিক আচরণ করতেই ভুলে যাই! সুতরাং সব চিন্তা বাদ দাও।
ইন্টারভিউ বোর্ডে ঢোকার সময় কল্পনা করে নাও বোর্ডের মানুষগুলো সবাই তোমার পরিচিত। ঐযে জাঁদরেল গোঁফওয়ালা মানুষটা- তিনি তোমার বড় চাচা! আর ভারী ফ্রেমের চশমা পরে টেবিলের কোণায় বসে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে আছেন যিনি- উনি তো তোমার পাশের বাসার আঙ্কেল, প্রতিদিন সিঁড়িতে দেখা হয় ওনার সাথে! এভাবে বোর্ডের মানুষগুলোকে আপন করে নাও মনে মনে, দেখবে গলা কাঁপাকাঁপি একদম হচ্ছে না আর! পরিচিত মানুষজনের সাথে গল্প করছো এমন সাবলীল ভাবে কথা বলতে বলতেই দেখবে কখন ইন্টারভিউ শেষ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ