Depression: ঘুরে দাঁড়াও নতুন উদ্যমে!


ডিপ্রেশন শব্দটার একটা গালভরা বাংলা অনুবাদ আছে- ‘বিষণ্ণতা আশ্চর্যের বিষয় হলো বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই শব্দটি ঠিক তার ব্যাপকতা বোঝাতে ব্যর্থ। ডিপ্রেশন মানে কিন্তুমন খারাপনয়। জীবনে চলার পথে বিভিন্নরকম দুঃখ-বেদনার সাথে আমাদের পরিচয় হয়, সময়ের পরিক্রমায় কষ্টগুলো বিলীনও হয়ে যায়। কিন্তু ডিপ্রেশনের অতলে ডুবে যায় যারা, তাদের ব্যক্তিত্বে বিষাদ তেমনি গাঢ়ভাবে মেখে যায়- যেখান থেকে উঠে আসতে তাদের প্রতিনিয়ত এক দুর্বিষহ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।
ব্যাপারটি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে এভাবে
 “The opposite of depression is not happiness, it’s vitality”
ছায়াচাপা গাছের চারা যেমন আলোর অভাবে নেতিয়ে পড়ে, জীবনের সকল রঙ হারানো এই মানুষগুলো তেমনি জীবন্মৃতের মতো বেঁচে থাকে।

সাদাকালো এক জঞ্জালের ক্যানভাস

ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষগুলোর পৃথিবী বর্ণহীন, স্বাভাবিক জীবনের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, স্পৃহা, কর্মচাঞ্চল্য এই অনুভূতিগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই সেখানে। আছে কেবল হৃদয়ের গহীনে বিদ্ধ একরাশ শূন্যতা। আপাতদৃষ্টিতে মানুষটার জীবনে কোন খাদ নেই, নিখুঁত ছিমছাম সাজানো সম্ভাবনাময় একটি জীবনের মাঝে এই তীব্র শূন্যতাবোধের কারণ সে বের করতে পারে না, শুধু অনুভব করে সে ভিতরে ভিতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে, ঘুণপোকার মতো শূন্যতা তার অনুভূতিগুলো একটু একটু করে খুবলে খেয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন।
সবকিছু ঠিক আছে, কিচ্ছু হয়নি আমার”- প্রতিনিয়ত নিজেকে প্রবোধ দিয়ে চলে মানুষটা, কাজের চাপে, বন্ধুদের আড্ডায়, প্রিয়জনের সান্নিধ্যে মনকে ভুলিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু একটা সময় থমকে যেতে বাধ্য হয় সে, শত মানুষের ভিড়েও যখন তীব্র একাকীত্বের হাহাকার ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে থেঁতলে দেয়, মানুষটা তখন সিদ্ধান্ত নেয়- অনেক হয়েছে, আর না। প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা পদক্ষেপে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আজ সে ভীষণ ক্লান্ত, এবার সময় হয়েছে জীবন থেকে ছুটি নেওয়ার। এভাবেই এই নির্দয় জগৎ থেকে সবার অগোচরে একদিন টুপ করে ঝরে যায় মানুষটা।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়টি হলো, ডিপ্রেশন কেন হয় তার প্রকৃত কারণ এখনো মানুষের কাছে অনেকটাই অজানা। মস্তিষ্কে কেমিক্যাল ইমব্যালেন্স, বংশগতি, ব্যক্তিজীবনে পারিপার্শ্বিকের প্রভাব প্রভৃতিকে দায়ী করা হলেও এর সুনিশ্চিত প্রতিকার এখনো কেউ দিতে পারেননি। ভুক্তভোগীর জন্য ব্যাপারটি যেন নিজের ছায়ার সাথেই যুদ্ধ করা প্রতিদিন। কিন্তু তাই বলে তো হাল ছেড়ে দিয়ে ঝরে পড়া চলবে না।
তোমার যদি কখনো এমন অনুভূতি হয়ে থাকে, জেনে রাখো, তুমি একা নও। তোমার আগেও পৃথিবীতে বহু মানুষ ডিপ্রেশনের কবলে পড়েছে, এবং অত্যন্ত সফলভাবে ওভারকাম করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। সুতরাং ডিপ্রেশনের কালোছায়া যদি তোমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েও ফেলে, ভয় পেয়ো না, হাল ছেড়ে দিয়ো না। বুকে বিশ্বাস রাখো, তুমি পারবে। বিশ্বাসের বলে মানুষ পৃথিবীকে পদতলে নিয়ে আসতে পারে, আর ডিপ্রেশন তো কোন ছার! চলো, এবার সবাই একসাথে রুখে দেই ডিপ্রেশনের সর্বনাশা আগ্রাসন।

থামিয়ে দাও শূন্যতার নিনাদ!

পৃথিবীতে লজিক ছাড়া কখনো কিছু ঘটে না। ডিপ্রেশনে ভোগার পেছনেও অনেকগুলো কারণ থাকে। একেকটা মানুষের জীবনে একেক রকম কারণ। কারণগুলো ধরে ধরে চিহ্নিত করতে পারলেই সমস্যার সিংহভাগ সমাধান হয়ে যাবে! তুমি একটা কলম আর সাদা কাগজ নিয়ে বসো। এবার খুব ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখো, কেন তোমার মন খারাপ লাগছে? কেন এই শূন্যতা?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথায় প্রথমে যেটা আসবে তা হচ্ছেজানি না!” কিন্তু এটা তো কোন উত্তর হলো না, তাইনা? সুতরাং আবার ভাবো। দেখবে একটু একটু করে বিভিন্ন পয়েন্ট ভিড় করছে মনে। সেগুলো ঝটপট লিখে ফেলো কাগজে। ছোট-বড় কোন পয়েন্টই বাদ দিয়ো না। ব্যাস, কাজ শেষ! এবার এই কাগজটি খুব যত্ন করে এমন জায়গায় রেখে দাও যেন প্রতিদিন দেখতে পারো তুমি। আজ থেকে এই কাগজটি হবে একটা ফায়ারিং স্কোয়াড। কাগজের পয়েন্টগুলোকে এক এক করে সংকল্পের বুলেটে ঝাঁঝরা করে দেবে তুমি, যেন আর কোনদিন দুঃস্বপ্নেও হানা দিতে না পারে এই কারণগুলো তোমার জীবনে।
সুখ-দুঃখ আসলে মনের ব্যাপার, আমরা সবসময় বোকার মত এগুলো মাপতে যাই অন্যদের সাথে তুলনা করে।

মনের ঝাঁপি মেলে দাও!

জ্বর হলে টেম্পারেচার মাপা যায়, আঘাত পেলে ক্ষতস্থান থেকে ঝরা রক্তে তা প্রকাশ পায়। কিন্তু ডিপ্রেশন ব্যাধির বিস্তার ঘটে মনের গভীরে, বাইরে থেকে তা বুঝা দুঃসাধ্য। সুতরাং কেউ হাত বাড়িয়ে দেবে সে আশায় বসে থাকলে চলবে না, তোমার নিজে থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে।
ঘর অন্ধকার করে জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখো না। প্লিজ, প্লিজ! তোমার সমস্যাগুলো কারো সাথে শেয়ার করো।সবাই হাসাহাসি করবে”, “লোকে বলবে ঢং দেখে বাঁচি নাএই চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। কে কি বললো না বললো তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তোমার সুস্থতা। একবার মনের আগল খুলে দাও, সব ব্যথা গড়িয়ে যাক অশ্রুধারায়, দেখবে অনেক হালকা লাগছে নিজেকে।

নিজেকে ভালবাসতে শেখো!

শরীরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমরা নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করি, ঘুমাই, ব্যায়াম করি আরো কতো কী। কিন্তু মনের স্বাস্থ্য বলেও যে একটা বিষয় আছে, এবং নিয়মিত যত্নআত্তি না করলে তারও যে অসুখ হতে পারে সেটা আমাদের খেয়াল থাকে না।
এখন থেকে নিজেকে অনেক অনেক বেশি করে ভালবেসে এতদিন মনের প্রতি যে অত্যাচার করেছো সেটা সারিয়ে তোলো। একটা কথা মনে রাখবে, তুমি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটাকে দেখতে চাও, তাহলে আয়নার দিকে তাকাও। আবার তুমি যদি পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটাকে দেখতে চাও, তাহলেও আয়নার দিকে তাকাও।
সুখ-দুঃখ আসলে মনের ব্যাপার, আমরা সবসময় বোকার মত এগুলো মাপতে যাই অন্যদের সাথে তুলনা করে। অথচ তোমার সামান্য আঙ্গুলের ছাপটাও  পৃথিবীর আর কারো সাথে মেলে না, সারা পৃথিবী ঘেঁটে ফেললেও ঠিক তোমার মত আরেকটা মানুষ কোথাও পাওয়া যাবে না। স্রষ্টা তোমাকে এতটাই অনন্য, এতটাই স্পেশাল করে বানিয়েছেন। সুতরাং তুমি নিজেকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসতে শেখো, কোন অপূর্ণতাই তোমাকে ছুঁতে পারবে না।কোন কিছুতেই আমার কিছু আসে যায় নাএই ছোট্ট কিন্তু অসম্ভব শক্তিশালী কথাটি বুকে গেঁথে নিও, কথা দিচ্ছি কেউ তোমাকে দুঃখ দিতে পারবে না আর কোনদিন।

আজকের দিনটার জন্য বাঁচো!

কেউ যদি তোমাকে এসে বলতো, তোমার আর মাত্র ২৪ ঘন্টা আয়ু আছে, তুমি কিভাবে কাটানোর প্ল্যান করতে সময়টুকু? নিশ্চয়ইআমার জীবনটা ব্যর্থ..আমাকে দিয়ে কিছু হবে নাএসব ভেবে ভেবে কাটিয়ে দিতে না দিনটি! তাহলে আজ কেন এভাবেই পার করছো অমূল্য সময়গুলো এসব ছাইপাঁশ ভেবে? জেগে ওঠো! প্রাণভরে দেখো জগৎটাকে! ৭০০ কোটি মানুষ সবাই মিলে পৃথিবীজুড়ে বিশাল এক পরিবার আমরা, তার মাঝে কেন একাকী হয়ে থাকবে তুমি? বাবা-মা কে অনেকদিন বলা হয়না ভালবাসি, আজ নাহয় দুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললে, “ভালবাসি তোমাদের ভীষণ!” ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা পথশিশুটির শীতের কাঁপুনিতে ঘুম হয়নি সারা রাত, ওকে কম্বলের উষ্ণতার আলোয় মুড়িয়ে দাও, দেখবে জীবনের নতুন এক মানে খুঁজে পাবে তুমি!
হোক না নতুন করে শুরু সবকিছুর!
জীবনটা যে সত্যিই ভীষণ সুন্দর!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ