Frustration, পড়াশোনা এবং কিছু কথা


(সুপারহিরোদের বিচরণ আমাদের কল্পনার জগতেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমাদের চারপাশেই এমন সব মানুষ রয়েছেন, হার না মানা সংকল্প প্রচেষ্টার বলে যারা কল্পনার অতিমানবদেরও ছাড়িয়ে যান। আসুন, পরিচিত হই পৃথিবী বদলে দেওয়া এই মানুষগুলোর সাথে, সীমিত গন্ডিবদ্ধ জীবনে যাদের গল্প একরাশ অনুপ্রেরণায় স্ফূর্ত করে তুলবে আপনার হৃদয়।)
২০১১ সালে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রে যখন তাঁর বিশ্বনন্দিতদি অপরাহ উইনফ্রে শোএর সুদীর্ঘ পঁচিশ বছরের যাত্রার ইতি টানেন, তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো- এই পঁচিশ বছরে তাঁর টক-শো তে যারা অতিথি হয়ে এসেছেন, তাঁদের মাঝে তাঁর সবচেয়ে পছন্দের অতিথিটি কে? সবাইকে অবাক করে দিয়ে অপরাহ বলেন, “Tererai Trent!” শুনতে অবাক লাগছে, তাই না?
পঁচিশ বছরে অপরাহ এর শো তে অজস্র বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অতিথি হয়ে এসেছেন, যাদের মাঝে প্রেসিডেন্ট, সম্রাজ্ঞী, হলিউডের নায়ক থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই যে ছিলেন না। সুতরাং এত জগদ্বিখ্যাত অতিথিবর্গের মাঝে থেকে অপরাহ যখন অখ্যাত এই মানুষটিকে বেছে নিলেন সবচেয়ে প্রিয় অতিথি হিসেবে, সবার মনে তখন প্রশ্ন জাগলো, কে এই ‘Tererai Trent’? কোন কীর্তির বলে তিনি এত বাঘা বাঘা তারকাদের টপকে শ্রেষ্ঠ অতিথি হিসেবে অপরাহ মনে জায়গা করে নিয়েছেন?
চলুন পাঠক! জেনে নেওয়া যাক জিম্বাবুয়ের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে কিভাবে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন এই স্বপ্নদ্রষ্টা নারী তার গল্প।

মীনা কার্টুনএর সেই মিনা যখন বাস্তবে

টেরেরাহ ট্রেইনটের জন্ম জিম্বাবুয়ের এক নিতান্ত অজপাড়াগাঁয়। আজন্ম শৈশব তার দারিদ্র্যের হাত ধরে পথচলা। যে কুঁড়েঘরে তার পরিবারের আবাস, সেখানে না ছিল সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, না ছিল একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখার সাহস।
ছোট্ট টেরেরাহ খুব অল্প বয়সেই জীবনের রূঢ় বাস্তবতার সাথে পরিচিত হন। পড়ালেখার প্রতি তার ছিল ভীষণ আগ্রহ। কিন্তু তার বাবা বাধ সেধে বলেন, পড়ালেখা ছেলেদের কাজ, মেয়েদের পড়ালেখা করানো সময় অর্থের অপচয়। সুতরাং ভাই তিনাশে যখন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, বেচারী টেরেরাহ তখন মায়ের সাথে রান্নাঘরে চুলায় হাঁড়ি চড়াতে ব্যস্ত। কিন্তু তাই বলে তিনি হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। সবার চোখ এড়িয়ে চুপিচুপি তিনাশের বই খাতা পড়ে শেখা শুরু করলেন। কিছুদিনের মধ্যেই টেরেরাহ এত পারদর্শী হয়ে উঠলেন যে তিনি ভাইকে ছাড়িয়ে গেলেন পড়ালেখায়! তিনাশে যখন বাইরে ফুটবল খেলতে ব্যস্ত, টেরেরাহ তখন গভীর মনোযোগে ভাইয়ের হোমওয়ার্ক করে দিতে লাগলেন ঘরে বসে।
এদিকে তিনাশের স্কুলে তার শিক্ষকেরা পড়লেন গভীর ধন্দে। তিনাশে ক্লাসে ভীষন অমনোযোগী ছেলে, কিন্তু তার হোমওয়ার্কগুলো ক্লাসের সেরা ছাত্রটিকেও লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে! একটু খবর নিতেই বেরিয়ে পড়লো থলের বিড়াল। শিক্ষকেরা স্তম্ভিত হলেন ছোট্ট টেরেরাহর অসাধারণ মেধা পড়ালেখার প্রতি তীব্র আগ্রহের পরিচয় পেয়ে। তাঁরা সবাই মিলে তখন গেলেন টেরেরাহর বাবার কাছে, সবার অনুরোধে টললো বাবার মন। পূরণ হলো ছোট্ট টেরেরাহর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন!
এই ক্যানের ভেতর আছে স্বপ্ন! যে স্বপ্ন আমাকে বিশটি বছর ঘুমাতে দেয়নি!

গরুর বিনিময়ে বিয়ে

খুব বেশিদিন টেরেরাহর কপালে এই সুখ সইলো না। তার বাবা অভাব দূর করতে একটি গরুর বিনিময়ে মেয়েকে তুলে দিলেন পাত্রপক্ষের হাতেটেরেরাহর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। শ্বশুরবাড়িতে তার বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা ছিল না। পড়ালেখার সুযোগ চাইলে স্বামীর হাতে বেদম প্রহৃত হতেন। মাত্র আঠার বছর বয়সেই টেরেরাহর কোলে এলো তিন সন্তান, গ্রামের আর সব মেয়েদের মতোই সব স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে সারাদিন ঘরের কাজ সন্তানের লালনপালনে কেটে যেতে লাগলো তার দিনগুলো।

পুঁতে রাখা স্বপ্নের বীজ

হয়তো এখানেই যবনিকা নামতো টেরেরাহর গল্পের, কিন্তু একটি ঘটনায় বদলে গেলো তার জীবনের মোড়। Jo Luck নামে একজন বিখ্যাত নারী উদ্যোক্তা তাদের গ্রাম সফরে এসেছিলেন। তিনি গ্রামের সব নারীকে একত্রিত করে প্রশ্ন করলেন, “তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটি কি?” এই কথাটি টেরেরাহর মনে ভীষণভাবে গেঁথে গেল। যেই ভাবা সেই কাজ, ঠিক করে ফেললেন জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন- যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া, ব্যাচেলর্স, মাস্টার্স এবং সর্বশেষ পিএচডি সম্পন্ন করা।
একটি কাগজে গুটিগুটি অক্ষরে লিখে ফেললেন স্বপ্নগুলো, তারপর একটা টিনের ক্যানে ভরে পুঁতে রাখলেন মাটির গভীরে। স্বপ্নগুলো মাটিচাপা পড়ে রইলো, কিন্তু সে স্বপ্নের বীজ রয়ে গেল হৃদয়ের গভীরে।

ধাপে ধাপে আলোর দেখা

টেরেরাহর প্রথম স্বপ্নটি পূরণ হয় ১৯৯৮ সালে, যখন স্বামী পাঁচ সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমায় পাড়ি জমান তিনি। নতুন পরিবেশে নিদারুণ সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে হয় তাকে, তবু সবদিক সামলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার তিন বছরের মাথায় ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বামীর নির্যাতন সময় চরমে ওঠে। টেরেরাহ সিদ্ধান্ত নেন, অনেক হয়েছে, আর মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য নয়। স্বামীকে ডিভোর্স দেন তিনি, তীব্র পারিবারিক কলহের মাঝেও পড়ালেখা চালিয়ে ২০০৩ সালে অর্জন করেন মাস্টার্স ডিগ্রি।
প্ল্যান্ট প্যাথোলজিস্ট মার্ক ট্রেন্ট কে বিয়ে করার মাধ্যমে শুরু হয় তার জীবনের এক নতুন অধ্যায়।

স্বপ্ন যাবে বাড়ি

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এলো ২০০৯ সালে, ওয়েস্টার্ন মিশিগান ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএচডি সম্পন্ন করেন! তার জীবনের সবচেয়ে সেরা স্বপ্নটি আজ ছোঁয়া হয়েছে, এবার সময় এসেছে বাড়ি ফেরার। টেরেরাহ তার পরিবার নিয়ে জিম্বাবুয়ের গ্রামে তার সেই কুঁড়েঘরটিতে ফিরে গেলেন। কিন্তু আঠারো বছর আগে টিনের ক্যানে স্বপ্ন পুঁতে রেখেছিল যে মেয়েটি, সে ছিল একদম একা, অসহায়। আজকের ডক্টরেট ডিগ্রিধারী নারীটি অনেক পরিণত, পৃথিবীর এপার ওপার বিজয় করা হয়ে গেছে তার। সমগ্র গ্রামবাসীকে সাথে নিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে চলেন তিনি, দুরুদুরু উত্তেজনায় কাঁপছে তার বুক। এদিক ওদিক কি যেন খুঁজে বেড়ায় তার চোখ, বহু বছরের পরিক্রমায় সবকিছু অনেক বদলে গেছে, তবু জায়গাটি ঠিক খুঁজে পান তিনি। স্বামী, সন্তান শত শত গ্রামবাসীদের সামনেই ছুটে যান মাঠের প্রান্তরে, খুঁড়তে থাকেন মাটি। সবাইকে বিস্মিত করে ধুলোবালিমাখা একটি টিনের ক্যান বের করে আনেন তিনি গর্ত থেকে।কি এমন আছে ওই ক্যানের ভেতর টেরেরাহ?” জানতে চায় সবাই।
টেরেরাহর চোখে অশ্রুর ধারা নামে। বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “এই ক্যানের ভেতর আছে স্বপ্ন! যে স্বপ্ন আমাকে বিশটি বছর ঘুমাতে দেয়নি!”

অপরাহ উইনফ্রেহর সবচেয়ে প্রিয় অতিথি

২০১১ সালে টেরেরাহ ট্রেন্ট যখন অপরাহ শো তে আমন্ত্রিত হয়ে আসেন, তিনি ঘুণাক্ষরেও ভাবননি তার জন্য কি বিস্ময় অপেক্ষা করছে! অপরাহ টেরেরাহকে নির্বাচিত করেন তার সর্বকালের সেরা অতিথি হিসেবে, এবং তার স্বপ্নের স্কুলের জন্য দেড় মিলিয়ন ডলার ডোনেট করেন!
এই স্বপ্নের স্কুলের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৪ সালে। আজ জিম্বাবুয়ের সেই গ্রামটিতে নিরক্ষর কোন শিশু নেই। কোন মেয়েকে আজ শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়না। স্কুলের হাজারো শিক্ষার্থী সবাই যেন গ্রামটিকে আলোকিত করে রেখেছে। শিশুদের কলকাকলিতে মুখরিত স্কুল প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে টেরেরাহ ভাবেন, “এই তো সত্যি হলো আমার স্বপ্ন! যখন আমি স্বপ্নটি দেখেছিলাম, তখন আমার সাথে কেউ ছিল না, অথচ আজ সমগ্র বিশ্ব এসে দাঁড়িয়েছে পাশে! জীবদ্দশাতেই আমার সবগুলো স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে, আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কে হতে পারে?!”
সত্যিই তো, স্বপ্ন দেখতে জানা মানুষগুলোর চেয়ে সুখী আর কেউ কি হতে পারে?
স্কুল কিংবা কলেজে পাশে বসাআমি-সব-প্রশ্নের-উত্তর-জানিকিংবাঈশ্বর-প্রদত্ত-মেধাসম্পন্নবলে নামডাক ছড়ানো পরিচিত ছেলে কিংবা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কম বেশি আমরা সবাই একটা সময় বেশ frustrated হতাম, বা এখনো হই। অনেকে আবার হয়ত ভাবা শুরু করেছেলেটা/মেয়েটা গ্যালাক্সির অন্যপ্রান্ত থেকে আসা কোনো অ্যালিয়েন নয় তো!” হুম্, বেশ চিন্তার বিষয়! কিন্তু যত ভাবনা চিন্তাই করা হোক না কেন তার সকল রহস্য উদ্ঘাটনে, খুব কম ছাত্রছাত্রীই আছে যারা নিজ থেকে যেয়ে কথা বলে সেইসবঅ্যালিয়েনদের সাথে তাদেরঅস্বাভাবিকফলাফলের কারণ জানতে।
তো গেল সমস্যার একটা অংশ। অনেকে আবার নিজের শোচনীয় অবস্থার কথা চিন্তা করে ভেঙ্গে পড়ে, হতাশায় ডুবতে থাকে একটু একটু করেআর facebook pissed off স্ট্যাটাস দিয়েই সকল দায়িত্ব শেষ বলে মনে করে। আসলেই কি তাই? কিছুই কি করার নেইহতাশানামক বিষয়টা কাটিয়ে উঠার?
আমাদের দেশের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার একঘেয়ে স্টাইলের বদৌলতেপড়াশোনামানেই এক বিভীষিকা ছাত্রছাত্রীদের কাছে।পড়তে বসতে হবে’- কথা ভাবলেই যেখানে জ্বর উঠে যাবার উপক্রম হয় সবার, সেখানে হতাশ হওয়াটাই বোধ করি স্বাভাবিক। কিন্ত বাস্তবতা কি বলে?
নাহ। মোটেই না। হয়তবা যারা এই লেখাটা পড়ছ/পড়ছেন, ইতিমধ্যেই তাদের নাক-ভ্রূ কুঁচকে গেছে।পড়ালেখাবিষয়টা পবিত্র। জোর করে যেমন কিছু হয় না, এটাও ঠিক তাই। একে শ্রদ্ধা করতে হয়, ভালোবাসতে হয়, যত্ন করতে হয়, একটু একটু করে সখ্যতা গড়ে তুলতে হয় এর সাথে। অদ্ভুত লাগছে কথাগুলো? বাস্তবতা কিন্তু এটাই। তোমরা যাদেরঈশ্বর-প্রদত্ত-মেধাসম্পন্নবলে মনে কর, তারা ঠিক এই কাজটাই করে।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের অনেক উক্তির মাঝে একটা আমার বেশ পছন্দ।Insanity: doing the same thing over and over again and expecting different results.একদম খাঁটি কথা। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, প্রতিনিয়ত একই কাজ দিনের পর দিন করে গেলে এই প্রচেষ্টা থেকে কখনো ভালো ফল আশা করা যায় না, আর যদি আশা করে থাক তবে তুমি insane বা উন্মাদ বৈ আর কিছুই নও!
যারা নিজেদের এতদিন হতাশার সাগরে ডুবিয়ে রেখেছিলে, বুঝতেই পারছ কি দরকার তোমাদের। YOU NEED CHANGE. যদি ভালো কিছু করতে চাও তোমার বর্তমান অবস্থা থেকে, পরিবর্তন আন। হতে পারে সেটা তোমার পড়ার স্টাইলে কিংবা পড়াশোনার প্রতি তোমার দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর তোমাদের কথা মাথায় রেখে এই ‘change’ এর সুবিধার্থে কিছু গুটিকয়েক পরামর্শ।

লাগাতার পড়াঠিক তো?

কখনো কি এমন হয়েছে, তুমি পড়তে বসেছ ঘন্টাখানেক আগে কিন্তু যতই সময় বাড়ছে ততই মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না? তুমিও আর না পেরে রাগ করেআমাকে দিয়ে কিছুই হবে নাভাবতে ভাবতে উঠে পড়লে পড়া থেকেকিংবা হয়তবা তুমিও ক্ষান্ত দেবার পাত্র নয়! লেগেই আছ পড়াটা নিয়ে……যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে দুটোই ছিল তোমার ভুল! আমাদের অনেক সাধারণ ভুল পদ্ধতির একটা হল লাগাতার পড়ে সব শেষ করে ফেলার ঝোঁক। আমরা সবাই ভাবি একটানা পড়লেই বোধহয় পড়ার flow তে সব শেষ হয়ে যাবে। গবেষণা কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। তুমি একটানা না পড়ে যদি  বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে একই পড়াটা বিভিন্ন interval- পড়, তাহলে পড়াটা মনে থাকে বেশী। আমি কিন্তু এসব নিজ থেকে বলছি না। এগুলো সবই হল বিভিন্ন গবেষনাপ্রাপ্ত ফলাফল।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, “এত এত পড়া, interval নিয়ে পড়তে গেলে তো কিছুই শেষ হবে না!” একটু খেয়াল কর। আমি কিন্তু বলেছিবিশ্রাম নিয়ে নিয়ে একই পড়াটা বেশ বিভিন্ন interval পড়”- আমি কিন্তু বলিনিবিভিন্ন পড়া! অর্থাৎ বিশ্রাম বলতে হতে পারে তুমি এতক্ষণ পদার্থবিজ্ঞান পড়ছিলে, এখন সেটা রেখে ইংরেজী পড়লে কিছুক্ষণ। আশা করি বুঝতে পেরেছ।

সঙ্গীতে মনচর্চা

আমার এক বন্ধু আছে। সারাদিন তো গান শুনেই, পড়ার মাঝে তো অবশ্যই। ওর মূলমন্ত্রই যেন, “Earphones in. Volume up. Ignore the world” এটা নাকি ওর mind refresh করে পড়ার মাঝে। কথা শোনার পর আমি বেশ ঘাটাঘাটি করলাম বিষয়টা নিয়ে আর আবিষ্কার করলাম আসলেই তাই! আমরা তো সবাই জানি যে ‘music cheers people up’ কিন্তু পড়াশোনার সাথে যে এর এত ঘনিষ্ট সম্পর্ক আর এটা নিয়ে যে ইতিমধ্যেই শত শত গবেষণা হয়ে গেল, তা আর কয়জনই বা জানতাম আমরা। তো পড়ার মাঝে কিংবা বিরতির ফাঁকে ফাঁকে যদি গান শোন, আশা করি উপকৃত হবে।

কঠিন বিষয়গুলো আগে

‘Human psychology’ বড্ড অদ্ভুত এক জিনিস। প্রতিটি মানুষ তার নিজের মত করে সব কিছু পেতে চায়, নিজের comfort zone থেকে বের হতে চায় না। এক্ষেত্রেও একই। সবাই চায় কঠিন বিষয়গুলো শেষে পড়তে শুরুটা করতে চায় সহজ কোন topic দিয়ে। কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল কর। পড়তে বসার শুরুর দিকে আমাদের মনোযোগ বল আর পড়ার স্পৃহাই বল, দুটোই বেশি থাকে।পরে পড়ব, এখন না’- এরকম করতে করতে হয়তবা শেষে আর সময়ই পাবে না ভালোভাবে পড়ার। আর তাই কঠিন বিষয়গুলো আগে পড়াই সঠিক সিদ্ধান্ত। যদি তুমি ইতিমধ্যেই কঠিন বিষয়গুলো আগে পড়ায় অভ্যস্ত হয়ে থাক, তাহলে তো ভালোই। আর যদি এখনো না হও, তবে আজ থেকেই শুরু কর দাও!

আমি জানি আমি কি করছি 

এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা কিংবা বাসার প্রাইভেট টিউটর তোমার থেকে ভালো জানবেন না তোমার পড়াশোনার অবস্থা কিংবা কোন বিষয়ে তোমার বেশি নজর দেওয়া উচিত। এটা তুমি জানবে ভালো, যদি না তুমি ক্লাস থ্রি-ফোর এর হও! একটা কথা চিন্তা কর। যদি তুমি পড়াশোনা নিয়ে হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দাও কিংবা মন খারাপ করে বসে থাক তাহলে কিন্তু নিজেরই ক্ষতি। তোমার জীবনের দায়-দায়িত্বতো নিশ্চয়ই আর কেও নিবে না! আর এভাবে থাকলে কিন্তু তোমার পড়ালেখার কোন উন্নতি হবে না, বরং দিন দিন খারাপ হবে। তাই তুমি কি করছ, সেটা ঠিক কিনা- এসব নিয়ে নিজের খুব ভালো ধারণা থাকা ভীষণ জরুরী। নাহলে কিন্তু তোমার সব চেষ্টা, আমার এত কথা- সবই বৃথা যাবে।

পুরষ্কার এখন হাতের মুঠোয়!

এটা কিন্তু বেশ উপকারী। পুরষ্কার কিংবা খানিকটা বাহবা পেতে কে না ভালোবাসে। তাই বলে সেটা তো আর সবসময় পাওয়া সম্ভব নয়। আসলেই? কেমন হয় যদি বলি নিজের পুরষ্কার নিজের থেকেই নাও! এও কি সম্ভব? অবশ্যই। মনে কর তোমার রসায়নের তিনটা অধ্যায় পড়ে শেষ করতে হবে। কিন্তু তোমার যেমন বসে না পড়ার টেবিলেটাইপ অবস্থা! কি করবে? এভাবে তো আর থাকা যায় না। তো তুমি নিজের মনেই ঠিক করে ফেল, ‘আমি এই তিনটা অধ্যায় শেষ করতে পারলেই আমার প্রিয় সিরিজের দুটো এপিসোড দেখবো, অন্যথায় না!’ পড়তে তো তোমাকে হবেই তখন, কারণ তুমি নিশ্চই এটা মিস করতে চাইবে না!
এটা তো গেল একটা সাধারণ উদাহরণ। তুমি কি পুরষ্কার নিবে সেটা তো তুমি নিজেই ভালো জান। দেখবে একবার দুবার এরকম করলেই নিজের মাঝে একটা প্রফুল্লতা তো অনুভব করবেই, পড়াশোনাটাও ঠিকমত হবে। কথা একটাই- JUST FOCUS ON WHAT YOU REALLY NEED TO DO; DO ANYTHING TO MAKE THAT HAPPEN.

BUILD YOUR OWN STYLE

এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে তোমাকে অনেক কথাই বলবে। এই যেমন এতক্ষণ যাবত আমিও বলে গেলাম। সবকিছুর পরেও তোমার নিজস্ব একটা স্টাইল থাকা উচিত। যেমন মনে কর, আমার কলেজের সবচেয়ে মেধাবী বন্ধু অয়নের স্টাইলটা ছিল একদম অন্যরকম। অয়ন এক-দেড় ঘন্টা পড়ার পর পর আধ ঘন্টার মত ঘুমিয়ে নিত। এতে তার নাকি মনে রাখতে সুবিধা হত। এটা ছিল তার পড়ার স্টাইল। অনেকের রুটিন করে পড়লে পড়া ভালো হয়, অনেকেই আবার রুটিনটার জন্য চাপ অনুভব করে (যদিও রুটিন করে পড়াটা অধিকাংশ সময়ই উপকারী) রাত জেগে পড়াটা অনেকের জন্য ভালো, অনেকেই আবার জিনিসটার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। কোনভাবে পড়লে তুমি আগের থেকে ভালোভাবে পড়তে পারবে, বেশী পড়তে পারবে- এটা একটু চিন্তা করেই বের করা সম্ভব। তবে যেভাবেই পড় না কেন, কিছু সাধারণ বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। এই যেমন দিনে পর্যাপ্ত ঘুম। রাতে দেরী করে ঘুমালে সকালে হয় দেরীতে উঠতে হবে না হয় দুপুরে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে হবে। আমরা যাই পড়ি না কেন, মস্তিষ্কে সেসব সংরক্ষণের কাজ হয় এই ঘুমের মাঝে। আর তাই এর অনিয়ম কোনোভাবেই না।
এই তো। একেবারে শেষে চলে এসেছি। পড়াশোনা নিয়ে হতাশ হওয়ার কোন কারণই নেই। একটু নিয়মিত আর মাথা খাটিয়ে পড়লেই দেখবে ফল ভালো হওয়া শুরু করেছে, ইনশাআল্লাহ! তাছাড়াও youtube এসব নিয়ে অনেক ভিডিও পাবে। সেসব দেখলেই পুরো পড়ালেখা বিষয়টার প্রতি ভীতিই বল কিংবাহতাশমানসিকতাই বল, চলে যাবে।
এখন তো তুমি জেনেই গেলে, “ঈশ্বর-প্রদত্ত-মেধাসম্পন্নএর পেছনের কথা। তাহলে আজ থেকেই লেগে পড়!!!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ