আমাদের তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশকে আমি দেখি হতাশায় ভুগতে। তারা অনেক ডিপ্রেসড, জীবন নিয়ে মহা চিন্তিত তারা। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই হতাশা আসছে কোত্থেকে? উত্তর মেলে, এই হতাশার মূলে আছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই এক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারলে কিন্তু জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়, জীবনের অংক মেলাতে আর হতাশ হতে হয় না। আজ তাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সুখী একটা জীবন পাবার তিনটি উপায় বলে দিচ্ছি!
১। সবকিছুকে কঠিন করে না নিয়ে সহজভাবে চিন্তা করো:
আমাদের
সবারই
কিন্তু
এ
ধরনের
বন্ধু
আছে
যারা
সবসময়
বলতে
থাকে
“দোস্ত
আমার
কী
হবে,
আমি
পড়া
কিচ্ছু
পারি
না!”
আর
রেজাল্ট বের
হলে
দেখা
যায়
ফাটাফাটি একটা
নম্বর
পেয়ে
যায়
তারা!
আবার
আরেক
রকম
বন্ধু
আছে
যারা
বেশি
পড়ালেখা করে
না,
আর
সেটি
নিয়ে
তাদের
মাথাব্যথা নেই।
একশোতে
পাশ
নম্বর
চল্লিশ
তুলতে
পারলেও
তারা
খুশি।
প্রথম
ধরণের
বন্ধুদের মনে
সবসময়
চলতে
থাকে
যে,
বেশি
করে
ভালোমত
পড়াশোনা না
করলে
রেজাল্ট খারাপ
হবে,
তার
চাকরি-বাকরি হবে না,
বিয়ে
হবে
না,
কিচ্ছু
হবে
না!
তার
জীবনে
নেমে
আসবে
মহা
অন্ধকার। দ্বিতীয় ধরণের
বন্ধুদের মাথায়
খেলা
করে
অন্য
বিষয়।
পরীক্ষা তাদের
কাছে
স্রেফ
একটা
পরীক্ষাই। এটায়
খারাপ
করলে
পরের
টায়
ভালো
করবে,
সুযোগের তো
আর
অভাব
নেই-
এমনই
চিন্তাধারা তাদের।
তাহলে
যেটা
দেখা
যাচ্ছে,
স্রেফ
দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা
বলে
দুজন
বন্ধুর
পরীক্ষা নিয়ে
ধারণা
বেমালুম আলাদা
হয়ে
যাচ্ছে!
আমাদের
জীবনটাও কিন্তু
ঠিক
এরকমই।
চারপাশে তাকালে
দেখা
যাবে
প্রচুর
মানুষ
আছে
যারা
অনেক
কিছু
করেও
সুখী
না,
তাদের
কাছে
জীবনটাই একটা
হতাশার
নাম,
সবকিছুই কঠিন
তাদের
দৃষ্টিভঙ্গিতে। ভালো
কিছু
করলেও
সেটিকে
তাদের
কাছে
অনেক
কম
মনে
হয়!
কিছু
মানুষ
আবার
জীবনটাকে খুব
সহজভাবে নেয়।
তাদের
কাছে
সম্ভাবনা এলে
তারা
তা
হাসিমুখে গ্রহণ
করে,
সাফল্য
পায়।
আবার
ব্যর্থতায় ভেঙ্গে
না
পড়ে
তারা
নতুন
কিছুর
পথে
এগিয়ে
যায়।
সবকিছুকে সহজভাবে নেয়ার
বিরল
প্রতিভা তাদের!
আমরা
আমাদের
জীবনকে
কীভাবে
গড়ব,
সেই
সিদ্ধান্ত কিন্তু
আমাদেরই নিতে
হবে।
জীবনকে
আমরা
প্রথম
শ্রেণীর সেই
বন্ধুদের মত
বড্ড
কঠিন
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে
চালাতে
পারি,
আবার
দ্বিতীয় শ্রেণীর এই
মানুষগুলোর মত
সহজ
দৃষ্টিভঙ্গিতেও রাখতে
পারি।
Choice কিন্তু
আমাদের
হাতেই!
২। নিজের জীবন থেকেই খুঁজে নাও সুখ:
একটা গল্প বলি। দুটো বাচ্চার গল্প। একজন থাকে মস্ত একটা আলিশান বাড়ির আঠারো তলায়। আঠারো তলার জানালা থেকে সে দেখে, ছেঁড়া একটা হাফপ্যান্ট পরে আরেকটা বাচ্চা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলছে। আলিশান বাড়ির বাচ্চাটাকে তার মা নামতে দেয় নি, বৃষ্টিতে খেললে যদি তার অসুখ করে!আলিশান বাড়ির বাচ্চার মনে বড় কষ্ট। তার মনে হয়, সে যদি এই ছেলেটা হতো, তাহলে বুঝি কতোই না মজা করে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে পারতো! মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ঐ সময় নিচের বাচ্চাটার মনে চলছে আরেক কথা। তার বাসায় অভাব, অনাহার। তার মনে হয়, সে যদি ওই আলিশান বাড়ির ছেলেটা হতো, তাহলে না জানি কী সুখে থাকতে পারতো সে! বড় বাসা, ভালো জামা-কাপড়, ভালো খাবার- সবই পেতো সে!
নিজের চিন্তা-ভাবনাকে একটু পাল্টিয়ে দেখি আমরা
পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেও এই সমস্যাটা বিদ্যমান। অন্য মানুষ কী করে, তারা কেমন সুখে আছে এটি নিয়েই তারা প্রতিনিয়ত চিন্তিত। হতাশা তাদের শেষ হতেই চায় না! অথচ অন্যের জীবন নিয়ে না গবেষণা করে নিজের জীবনের খুঁটিনাটি একটু দেখলে, দুঃখভরা জায়গাগুলো একটু ভালো করার চেষ্টা করলে কিন্তু খুব ভালো থাকা যায়।অন্যের কথা না ভেবে, অন্যের পথে না চলে, নিজেই নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারলে আর কিছু লাগেই না। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে তাই জীবনটাও হয়ে যাবে অনেক সুখের।
৩। স্বপ্নগুলোকে উড়তে দাও:
প্রবাদ আছে, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ২৫ বছর বয়সে মরে যায়, আর পঞ্চাশ বছর পর তার দেহটা কবর দেয়া হয়। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কথাটা সত্যি। ২৫ বছরে গ্র্যাজুয়েশনের আগে আমাদের মনে কতই না স্বপ্ন থাকে, এটা করবো সেটা করবো। একের পর এক আইডিয়া আসতে থাকে মাথায়, দিতে ইচ্ছে করে ইউরোপ ট্যুর, আরো কতো কি! কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনের পর পরিবার থেকে চাপ আসে- বিয়ে করতে হবে, চাকরি নিতে হবে।চাকরিগুলো বেশিরভাগ সময়েই মনমতো হয় না, হতাশা বাড়তে থাকে। সাথে থাকে সংসার চালানোর চাপ, আর জীবন হয় কষ্টের। সেই যে স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হলো মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধের চাকুরি করে আর সংসারের ঘানি টেনে, সেখানেই আমাদেরও আসলে মৃত্যু হয়। থাকে শুধু নিরস দেহটাই।
কিন্তু এমনটা হবার তো কোন দরকার নেই! নিজের চিন্তা-ভাবনাকে একটু পাল্টিয়ে দেখি আমরা। চিন্তা করে দেখি, নিজের জন্যে, দেশের জন্যে বলার মত কী করছি আমরা? যদি কিছু না করেই থাকি, তাহলে করা শুরু করতে দোষ কী? বয়সটা হোক পঞ্চাশ কিংবা আরো বেশি, কাজের কাজ করলে সেটি কোন বাধাই নয়! নিজে কিছু করা শুরু করলেই দেখবে নিজেরও ভালো লাগছে, ইচ্ছে করছে আরো ভালো কাজ করতে!
0 মন্তব্যসমূহ