দোষটা কি আসলে তেলাপোকার?


গুগলের নতুন সিইও সুন্দর পিচাই। অসম্ভব গুণী এই মানুষটির একটি গল্প খুব জনপ্রিয় হয়েছিল কিছুদিন আগে। গল্পটি বলতে গেলে অনেকের ধারণাই পালটে দিয়েছিল নিজের জীবন সম্পর্কে! অথচ গল্পটি ছিল ছোট্ট একটি তেলাপোকা কে নিয়ে!
সুন্দর পিচাইয়ের অভ্যেস প্রতিদিন সকালে একটা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে বসে সকালের নাস্তা করা। সেখানে বসে কফির কাপটা হাতে নিয়ে চারপাশের মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে তার বড় ভালো লাগে। তো এমনই কোন এক সকালে পিচাই যথারীতি সেই রেস্টুরেন্টে এসে বসেছেন। তার ঠিক পাশের টেবিলেই দুজন ভদ্রমহিলা এসে বসেছেন। সকাল বেলা, রেস্টুরেন্ট বেশ জমজমাট।
এমন সময় হলো কি, কোত্থেকে একটা তেলাপোকা উড়ে উড়ে ঠিক সুন্দর পিচাইয়ের পাশের টেবিল, মানে ওই ভদ্রমহিলাদের টেবিলে এসেই বসলো। ভদ্রমহিলা দুজন তো রীতিমতো লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে ফেললেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে সে এক ভয়ানক অবস্থা! ছোট্ট তেলাপোকা, সে এই শোরগোলের মধ্যে ভয় পেয়ে দিলো এক উড়াল।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো এক ওয়েটার। হাত ভর্তি গরম গরম খাবার তার। একটুখানি এদিক সেদিক হলেই খাবারসুদ্ধ পড়ে যেতে হবে তাকে, এমন অবস্থা। তেলাপোকা বাবাজি উড়ে এসে সেই ওয়েটারটির কাঁধে এসেই বসলো। ততক্ষণে ভদ্রমহিলাদ্বয়ের চিৎকারে পুরো রেস্টুরেন্টের নজর ওই তেলাপোকার দিকে। সবাই রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ওয়েটার কি করে দেখার জন্যে।
ওয়েটার করলেন কি, খুব শান্ত ভাবে তার হাতের খাবার পাশের টেবিলে রাখলেন। তারপর আরো শান্ত ভঙ্গিতে এক টোকায় তেলাপোকাটাকে কাঁধ থেকে পুরো রেস্টুরেন্টের বাইরেই ছুঁড়ে ফেলে দিলেন! তার পরের মুহূর্তেই সে আবার খাবার পরিবেশন শুরু করলো, যেন কিছুই হয়নি এতোক্ষণ!
সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই
ব্যাপারটাতে সবাই বেশ মজা পেলেও সুন্দর পিচাইয়ের মনে তখন আরো গভীর একটা বিষয় চলছে। তার মনে হলো, ভদ্রমহিলাগুলোর চিৎকারে কোন লাভ তো হয়ই নি, বরং তাতে অহেতুক গোলযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে ঠান্ডা মাথায় ওয়েটারের দারুণ সিদ্ধান্তে ব্যাপারটা আর কোনরকম ঝামেলায় গড়ায় নি!
পিচাইয়ের মনে হলো, আমাদের জীবনটাও কিন্তু এরকমই! যেকোন সিচুয়েশনে আমরা যদি অকারণে React করি তাহলে ব্যাপারটা আরো খারাপের দিকে গড়াবে। কিন্তু সেখানে যদি আমরা Respond করি, তাহলে কিন্তু পুরো ব্যাপারটাই অন্যরকম হয়ে যাবে! ছোট্ট দুটি শব্দ React আর Respond, কিন্তু দুটির পার্থক্য পুরো ঘটনাকেই পালটে দেয়!
এক তেলাপোকার গল্প থেকে কিন্তু আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের সমাজে নতুন কিছু করতে গেলে, নিজের মত চলতে গেলে অনেকে অনেক কিছুই বলে। মানুষের সমালোচনার কোন শেষ নেই, সমালোচনা চলতেই থাকে। তুমি যেভাবেই থাকো না কেন, সমাজের কেউ না কেউ সেটি নিয়ে একটু হলেও ভ্রুকুটি করবেই! এটা বলতে গেলে একটা রীতি হয়ে গেছে আমাদের সমাজের।
এই সমালোচনা, তিরষ্কার, ভ্রুকুটি- এগুলো হচ্ছে ওই তেলাপোকাটার মতো। এরা যেকোন জায়গা থেকে কোন না কোনভাবে উঠে আসবেই! কিন্তু তুমি নিজেকে ওয়েটারের জায়গায় দেখবে, নাকি ওই ভদ্রমহিলার জায়গায়- এটিই বদলে দেবে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি। ভদ্রমহিলা দুজন ভয় পেয়েছেন, অহেতুক চিৎকার করে লোকসমাগম করেছেন। তাতে কিন্তু তাদের খুব সম্মান বৃদ্ধি হয় নি!
আমাদের জীবনে আমরা এই ভদ্রমহিলাদ্বয়ের মত ভয় পেলে তাতে যেটি হবে, সমালোচনা আমাদের পেয়ে বসবে। আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাবে যে আমরা অকম্মা, কোন কাজ পারি না, আমাদের দিয়ে কিচ্ছুটি হবে না। তাতে ক্ষতি বৈ লাভ কিছু হচ্ছে না।
অন্যদিকে তুমি যদি ওয়েটারের জায়গায় নিজেকে দেখো, ঠান্ডা মাথায় যেকোন পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত থাকো, তাহলেই কিন্তু জীবনটা অনেক সুন্দর আর সহজ হয়ে ওঠে। ওয়েটার যেমন শান্ত হয়ে এক টোকায় সব সমস্যার সমাধান করেছেন, তোমরাও তেমনি সমালোচনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই! এতে যেটা হবে, তোমার আত্মবিশ্বাস থাকবে পরিপূর্ণ, পরের কাজগুলোতে আরো সাহস করে আরো ভালো কাজ করতে পারবে! দারুণ হবে না সে ব্যাপারটা?
সুন্দর পিচাইয়ের গল্পটা এজন্যেই বলা, যে আমাদের জীবনের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে সমালোচনা আর তিরষ্কার। এসবের ভারে নুয়ে না পড়ে তোমাদের এগিয়ে যেতে হবে আপন আত্নবিশ্বাসে। তবেই না লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারবে তোমরা!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ