আমার এক স্যার একদিন আমার উপর ছোট্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট করেন। তিনি আমাকে বলেন,
“আয়মান, তুমি একটা কাজ করো। চোখ বন্ধ করে যেকোন কিছু নিয়ে চিন্তা করো।”
আমার তখন সামনে পরীক্ষা, সেটি নিয়ে মহা দুশ্চিন্তা মাথায় ঘুরঘুর করছে। আমি পরীক্ষা নিয়েই ভাবতে শুরু করলাম। খানিক বাদে স্যার আবার বলে বসলেন,
“কিন্তু আয়মান, একটা নিয়ম আছে। তুমি যা কিছু নিয়েই ভাবো, গোলাপি হাতি নিয়ে চিন্তা করাই যাবে না।’’
কিছুক্ষণ পরে স্যার চোখ খুলতে বললেন। আমি একরাশ স্বস্তি নিয়ে চোখ খুলতেই স্যারের প্রশ্ন:
“তাহলে এবার বলো, এতক্ষণ কী নিয়ে চিন্তা করলে?”
আমাকে বলতেই হলো যে, স্যার ওই গোলাপি হাতির নিয়মটা বলার পর থেকে মাথায় শুধু গোলাপি হাতিই ঘুরছে, এমনকি চোখ খোলার পরেও!
স্যার মৃদু হেসে বললেন, “এরকমই হয়। এটাকে বলা হয় ‘Pink Elephant Syndrome’.
আমরা সবসময় সেটা নিয়েই ভাবি যেটা করতে মানা করা হয় আমাদের। এই জন্যেই আসলে তোমাকে যদি কেউ বলে, দুঃখ করো না, তখন মনের মধ্যে দুঃখটা আরো বেড়ে যায়!”
স্যারের কথা শুনে আমার মনে হলো, আসলেই তো! স্যারের কথা কিন্তু একশো ভাগ সত্য! এরকম তো আমার সাথেও অনেক হয়! আমি যদি খুব ডিপ্রেসড থাকি, তখন যদি কেউ এসে বলে দোস্ত ডিপ্রেসড থাকিস না, প্রেশার নিস না, তখন কিন্তু আমার আরো বেশি খারাপ লাগে! বিষয়টা সেভাবে দেখলে আসলে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে মানুষগুলো কষ্ট আরো বাড়িয়ে দেয়!
এতোকিছু ভাবার পর মাথায় আরেকটা বিষয় এলো। এই যে এই সমস্যাটা থেকে আমাদের দুশ্চিন্তা, ফ্রাস্ট্রেশন আরো বেড়ে যায়, এর কি কোন সমাধান নেই? ভাবতে ভাবতেই মনে হলো এরও একটা সমাধান আছে। আমার এমনটা হলে সেই সমাধানটাই আমি কাজে লাগাতাম!
এমন একটা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে আসলে আমাদের এগোতে হবে ধাপে ধাপে। কয়েকটি ধাপে চেষ্টা করলে কিন্তু এই গোলাপি হাতির কাছ থেকে রেহাই পাওয়া যায়!
ধাপ ১:
প্রথমেই চিন্তা করতে হবে, সমস্যাটা আসলে কী? তুমি যদি ডিপ্রেসড থাকো, যদি হতাশা তোমাকে ঘিরে থাকে, তাহলে সেসবকে দূর করার থেকে সেগুলো নিয়েই কাজ করে যাবার চেষ্টা করে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, এধরণের সমস্যা জীবনে থাকবেই, এগুলো নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে তোমাকে। কিন্তু শুধুমাত্র এসব নিয়ে চললেও কিন্তু হবে না আবার!ধাপ ২:
সমস্যাটা চিহ্নিত করার পর সেটি নিয়ে ভাবা যাবে না। সমস্যা কীভাবে দূর করবো, সমস্যা আমার কী ক্ষতি করবে এসব নিয়ে ভাবতে থাকলে যতো দিন যাবে তোমার চারপাশ ঘিরে শুধু সেই সমস্যাকেই দেখতে পাবে, আর কিছুর দেখা পাবে না। তাই সমস্যা নিয়ে না ভেবে “সমস্যা সমস্যার জায়গায়, আমি আমার জায়গায়” মনে করে কাজ করে যেতে হবে।
তোমার নিজের জন্যে দরকারি সব কাজ শুরু করে দিতে হবে এখনই
ধাপ ৩:
নতুন কোন কাজে লেগে পড়তে হবে। কাজ বলতে কাগজ কলম পিষে অফিসের কাজ করতে হবে, তা কিন্তু নয়। নতুন কাজ হতে পারে যেমন খেলাধুলা করা, নতুন কোন একটা গল্পের বই পড়া, কোন একটা মুভি দেখা। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে, আর সেজন্যেই এসব করার দরকার। এগুলো ছাড়াও তোমার পছন্দের যেকোন কাজ করেও তুমি নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারো।ধাপ ৪:
নিজেকে যখন ব্যস্ত রাখতে শুরু করেছো, তখন দেখবে ধীরে ধীরে তোমার দুশ্চিন্তা, হতাশা এরকম সমস্যাগুলো আর তোমার কর্মব্যস্ততার সাথে পেরে উঠছে না। আর পারবেই বা কেন? তুমি তো মহা ব্যস্ত তোমার কাজগুলো নিয়ে! এখন তোমাকে তুলনামূলক দরকারি কাজ শুরু করতে হবে। পড়ালেখা এবং তোমার নিজের জন্যে দরকারি সব কাজ শুরু করে দিতে হবে এখনই!ধাপ ৫:
নিজেকে ব্যস্ত রাখলে তুমি, পাশাপাশি নিজের জন্যে একটু সময়ও বের করে ফেলেছো তুমি। আর কী লাগে? এই সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করলেই দেখবে তোমার এই যে দুশ্চিন্তা আর হতাশা সব চলে গেছে! কাজের চাপে তুমি সেটা টেরও পাও নি! এখন নিজের মত করে চলতে শুরু করবে তুমি, আবার যদি কোনদিন হতাশায় পড়ো তুমি, জানোই তো কী করতে হবে! সোজা ধাপ ১ এ চলে গেলেই কেল্লাফতে!মন খারাপ, হতাশা, দুশ্চিন্তা, এসব আমাদের মানসিক ব্যাপার। এগুলোকে মন থেকে ঝেড়ে ফেলা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাই এগুলো নিয়েই নতুন কোন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লে দেখা যাবে সব সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যায়!
0 মন্তব্যসমূহ