মনের উপর প্রভাব খাটানোর ৭টি চমৎকার কৌশল!


বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন ইফেক্ট

কেউ যখন তোমার কাছে সাহায্য চায়, মানুষটিকে পছন্দ না করলে নিশ্চয়ই তুমি তাকে সাহায্য করতে চাইবে না! আমরা যখন কাউকে সাহায্য করি, মানুষটি পরিচিত কেউ অথবা একদম অচেনা হোক না কেন, আমাদের মস্তিষ্কে মানুষটির প্রতি একরকম সহানুভূতি জন্ম নেয়। ধরো, কারো কাছে তোমার একটি জিনিস প্রয়োজন, কিন্তু চাইলে মানুষটি সাহায্য করবে তোমাকে সেই সম্ভাবনা কম!
বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিন একটি মজার আবিষ্কার করেছেন কারো কাছে কোন প্রয়োজন থাকলে তিনি প্রথমে মানুষটির কাছে খুব সাধারণ কিছু চাইতেন- খুব তুচ্ছ কোন জিনিস যেটিতে সাধারণত কেউ না করে না। যখন মানুষটি একবার সাহায্য করেছে তার অবচেতন মন ঠিক করে নিয়েছে নিশ্চয়ই ফ্র্যাংকলিন পছন্দের কোন মানুষ, তা নাহলে কেন সাহায্য করতে গিয়েছ? (অথচ মানুষটি হয়তো ফ্র্যাংকলিনকে আগে কখনো দেখেইনি!)
ফ্র্যাংকলিন এবার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে আসল সাহায্যটি চাইতেন। মানুষটির অবচেতন মন বলছে সাহায্য করতে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে মানুষটি একটু মাথা চুলকে রাজি হয়ে গিয়েছে সাহায্য করতে! তুমিও বাস্তব জীবনে এই মজার কৌশলটি কাজে লাগিয়ে দেখতে পারো!

বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিনের উল্টো ইফেক্ট!

সবার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই বেন ফ্র্যাংকলিনের কৌশলটি কাজে আসবে না! তাদের জন্য একদম উল্টো একটি কৌশল কাজে লাগানো যেতে পারে। মনে কর তোমার একটি ইঁদুর প্রয়োজন কিন্তু যার কাছে চাইতে গেছো সে খুব শক্ত মনের মানুষ, ইঁদুর দূরে থাক একটি চীনেবাদামের খোসাও তার হাত থেকে খসানো দায়! তুমি যদি শুরুতে গিয়েই একটি আস্ত হাতি চেয়ে আবদার করে বসো মানুষটি নিশ্চয়ই খুব হকচকিয়ে যাবে এবং মুখের উপর না বলে দেবে!
তখন তুমি একটু একটু করে আবদার কমাতে থাকবে- হাতি থেকে ঘোড়া, ঘোড়া থেকে গরু… “নাবলতে সবার মনেই একটি অস্বস্তি কাজ করে, এতবার না বলতে বলতে মানুষটির মন অনেকখানি নরম হয়ে যাবে, হাতি থেকে তোমার কাকুতি মিনতি যখন ইঁদুরে পৌঁছাবে আমি বাজি ধরে বলতে পারি মানুষটি মাথা ঝাঁকিয়ে রাজি হয়ে যাবে তোমাকে একটি ইঁদুর এনে দিতে!  

FAKE it till you MAKE it

অনেকসময় কেউ যখন মিথ্যে কথা বলে তখন তাকে দেখেই আমরা ধরে ফেলতে পারি মানুষটি মিথ্যে বলছে। এর কারণটি কি জানো? মানুষটি নিজেই জানে সে যা বলছে সেটি একবিন্দু সত্যি নয় এবং কথা বলার সময় তার আচরণে ব্যাপারটি প্রকাশ পেয়ে যায়। ভাল অভিনেতারা এই ব্যাপারটি জানেন, তাই তারা যখন অভিনয় করেন তখন চরিত্রের ভেতর একদম ঢুকে যান।
বাস্তবে মানুষটি হয়তো একদম নিরীহ, কিন্তু অভিনয়ে তার চরিত্রটি ভীষণ মাথাগরম কিছু হলেই ভাংচুর শুরু করে দেয়! তাই তারা অভিনয় শুরু করার আগে নিজেদের একদম সেভাবে কল্পনা করে নেন এবং সেজন্যই তাদের অভিনয়টি আমাদের কাছে এত বাস্তব মনে হয়! তোমার যদি কোন কাজে আত্মবিশ্বাসের অভাব হয় এবং নিজেকে খুব হতাশ মনে হতে থাকে- নিজেকে বেড়ালের জায়গায় বাঘ হিসেবে কল্পনা করো, একদম বিশ্বাস করে ফেলো তুমি সত্যি সত্যি একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার! দেখবে সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে গেছে!

ঝগড়া রাগে গীত

একটু কম বুদ্ধির মানুষগুলোকে দেখবে ছুঁতোনাতা একটা কিছু হলেই চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলে! বুদ্ধিমান মানুষেরা কখনো এমন করে না, খুব বাজে একটা কিছু ঘটেছে সত্যি সত্যি ভীষণ রাগ করার মতো, তখনও তারা মাথা ঠাণ্ডা রাখে কখনো মেজাজের নিয়ন্ত্রণ হারায় না। কেউ যখন তোমার সাথে ঝগড়া করতে আসবে তুমি কখনো গলার রগ ফুলিয়ে তর্ক শুরু করে দিবে না, ঠাণ্ডা মাথায় যুক্তি খাটিয়ে কথা বলো দেখবে মানুষটি দ্বিতীয়বার তোমার সাথে ঝগড়া করতে উৎসাহ পাবে না!
পত্রিকায় খুনখারাবির যেই খবরগুলো আমরা প্রতিদিন দেখি তার অনেকগুলোই কিন্তু খুব তুচ্ছ কোন কারণ থেকে শুরু হয়েছিল- কথা কাটাকাটি থেকে মারামারি, সেখান থেকে ভয়ানক মারপিট, খুন, জখম! অথচ দুপক্ষ একটু ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করে সমঝোতায় পৌঁছালে ব্যাপারটি গোড়াতেই মিটে যেত এতদূর আগানোর সুযোগই পেত না!  

মন বসে না পড়ার টেবিলে

প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে সেটি যেমন সত্যি, প্রযুক্তি আমাদের ভয়ানক অলসও করে দিয়েছে অনেক আঙ্গিক থেকে!
যেমন, ধরো তুমি একটি বই পড়তে গেলে চরিত্রগুলো তোমাকে কল্পনা করে নিতে হয়, ভিডিও দেখলে তোমার সেই কষ্টটুকু করতে হয়না কারণ পর্দায় সব তুমি দেখতেই পাও। শুধু তাই নয়, ভয়ের দৃশ্যে ভয়ের আবহ সংগীত, হাসির দৃশ্যে কমেডি শব্দটুকু পর্যন্ত দেওয়া থাকে- তোমার এতটুকু কষ্ট করে মনোযোগ বসাতে হয়না! আমরা সারাদিন অন্তর্জালে এমন হাজার হাজার ভিডিও দেখছি, গান শুনছি এবং নিজের অজান্তেই মনোযোগ বসানোর এবং চিন্তা করার গুণটি হারিয়ে ফেলছি একটু একটু করে!
সবসময় তোমার জীবনের নিয়ন্ত্রণটুকু রাখবে একদম নিজের কাছে
সে কারণেই আমরা খুব ছটফটে, সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি পেতে চাই এবং কোন কাজে ধৈর্য্য ধরতে আমাদের ভীষণ আপত্তি! মনোযোগ বসাতে পারা অনেক বড় একটি গুণ। পৃথিবীতে যত বড় বড় কাজ হয়েছে সেগুলো সম্ভব হয়েছে তার পেছনের মানুষগুলোর গভীর মনোঃসংযোগ ক্ষমতার কারণে। তাই মাঝেমধ্যে প্রযুক্তি থেকে ছুটি নেবে, দেখবে মনোযোগ বসানোর ক্ষমতাটি ফিরে পাচ্ছো একটু একটু করে!   

বাটারফ্লাই ইফেক্ট

বিজ্ঞানের একটি মজার থিওরি আছে বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামে। সেটি বলে- পৃথিবীর কোন প্রান্তে একটি প্রজাপতি তার ডানা ঝাঁকালে সেই অতি সামান্য ঝাঁকুনি পৃথিবীর অন্য একটি প্রান্তে ঝড় পর্যন্ত বইয়ে দিতে পারে!
ব্যাপারটি শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বাস্তবে এই থিওরিটির অহরহ উদাহরণ দেখতে পাবে। অপরাহ উইনফ্রে যখন ছোট্ট ছিলেন তখন একবার একজন বিখ্যাত মানুষ শিশু অপরাহর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, “কি সুন্দর একটি শিশু তুমি! কি অপূর্ব তোমার হাসি! আমি বাজি ধরে বলতে পারি বড় হয়ে তুমি পৃথিবীজুড়ে সবার মন জয় করে নিবে তোমার কাজের মাধ্যমে!”
তারপর কতো বছর কেটে গেল অপরাহ সেই কথাটি সবসময় মনে রেখেছেন কখনো ভুলেননি। বড় হয়ে তিনি একদিম সত্যি সত্যি পৃথিবীজুড়ে কোটি মানুষের  শ্রদ্ধা ভালবাসা কুড়িয়েছেন তাঁর কাজের মাধ্যমে! কখনো কখনো খুব ছোট একটি কথা, সামান্য একটু উৎসাহ একটি মানুষের জীবন একদম বদলে দিতে পারে! তাই সবসময় চেষ্টা করবে মানুষকে উৎসাহ দেওয়ার, তার গুণটির প্রশংসা করার। রাস্তা-ঘাটে, বাজারে, যানবাহনে মানুষের সাথে সুন্দর করে হেসে কথা বলার, তোমার এই ছোট্ট সুন্দর ব্যবহারটুকু সেই মানুষটির মন একদম ভাল করে দিতে পারে তুমি জানতেও পারবে না!

সবাই রাজা আমাদের এই মনের রাজত্বে

তোমার জীবনটি কেমন হবে সেটি নির্ভর করে দুটি জিনিসের উপর- মাত্র ১০% হচ্ছে তোমার সাথে কী ঘটছে তার উপর এবং তুমি বিষয়টিতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছো সেটির উপর নির্ভর করছে ৯০%!
অনেক মানুষ দেখবে সবকিছুর দায়ভার অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়। তারা পরীক্ষায় খারাপ করে কারণপ্রশ্ন কঠিন হয়েছিল!”, তাদের ক্লাসে আসতে দেরি হয় কারণরাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল লক্ষ্য করলে দেখবে, তাদের গোটা জীবনটাই মোটামুটি অজুহাত বের করতে করতেই কেটে যায় এবং জীবনে উন্নতি করার সময়টুকুও আর মেলে না!
তাই সবসময় তোমার জীবনের নিয়ন্ত্রণটুকু রাখবে একদম নিজের কাছে। অনেকসময় কিছু মানুষ থাকবে তারা তোমার জীবনে নানারকম যন্ত্রণা তৈরি করবে, এই মানুষগুলোর প্রতি আমরা একটি তীব্র ঘৃণা বুকে পুষে রাখি কিন্তু আমি বলবো তুমি এই ঘৃণাটুকু মুছে ফেলো। পৃথিবীর কারো এতটা গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার নেই যার জন্য তোমার হৃদয়ে ঘৃণার মতো একটি বিষাক্ত অনুভূতি পুষে রাখবে। তোমার জীবনে মন খারাপ করা যে অভিজ্ঞতাগুলো ঘটবে তার ক্ষমতা মাত্র ১০%; ভালবাসা, শান্তি, তৃপ্তি  এই জিনিসগুলো দিয়ে হৃদয় জুড়িয়ে রাখার ৯০% ক্ষমতা কিন্তু তোমার হাতে!  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ