স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল”- ক্রীড়াবিদদের ক্ষেত্রে কথাটা আরো বেশি সত্য। একজন সফল ক্রীড়াবিদের কথা বললে, আমাদের চোখে ভাসে সুস্থ সবল স্বাস্থ্যের অধিকারী একজন মানুষের কথা। কিন্তু সবার পেছনের গল্পটা এক নয়। তাঁদের গল্প নিয়েই আয়োজন, যাঁরা শারীরিক নানা সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে হয়েছেন প্রকৃত বিজয়ী।

লিওনেল মেসি

বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলারের তর্কে যার নাম অবশ্যম্ভাবীভাবে চলে আসে, তিনি হলেন আর্জেন্টাইন ফুটবলার লিওনেল মেসি। মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁর এক প্রকার গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি দেখা দেয়। চিকিৎসা নিতে প্রতি মাসে প্রায় এক হাজার ডলার প্রয়োজন ছিল, যা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর পরিবারের ছিল না। ট্রায়ালে তাঁকে দেখে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর সাথে চুক্তি করে এবং তাঁর চিকিৎসার ভার নেয়। পরের ইতিহাস কারো অজানা নয়!

মোহাম্মদ আলী

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় একটি নাম সবসময় ওপরের দিকে থাকবে, তিনি হলে বক্সার মোহাম্মদ আলী।পারকিনসন্স ডিজিসনামে এক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এটি নিউরনে সংঘটিত এক প্রকার বিরল ব্যাধি। এসব নিয়েই মোহাম্মদ আলী হয়েছেন বিশ্বসেরা ক্রীড়াবিদ, সাধারণের কাছে এক বিরাট অনুপ্রেরণা।

উইলমা রুডলফ

১৯৬০ অলিম্পিকে তিনটি স্বর্ণ জেতা উইলমা ছিলেন তাঁর সময়ের দ্রুততম মানবী। কিন্তু ছোটবেলায় পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। কখনোই সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেন নি তিনি, তাঁর বাম পা ছিল কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ। এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে দৌড়েই তিনি হয়েছিলেন দ্রুততম মানবী।

মাইকেল আথারটন

ক্রিকেট পাগল জাতি হিসেবে সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার মাইকেল আথারটন বা বর্তমান সময়ের ধারাভাষ্যকার মাইকেল আথারটনের নামটি আমাদের কাছে বেশ পরিচিত। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অথচ তিনি বিরল এক ব্যাধি- অ্যাংকোলাইজিং স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত। যার ফলে বাউন্স বলে তিনি ডাক করতে পারতেন না! এই সীমাবদ্ধতা নিয়ে খেলেই তিনি প্রায় দশ হাজার রান আর ১৮ টি সেঞ্চুরির মালিক।

ভেনাস উইলিয়ামস

বিখ্যাত উইলিয়ামস বোনদ্বয়ের বড় বোন, মার্কিন টেনিস তারকা ভেনাস উইলিয়ামস Sjogren’s syndrome নামক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে ২০১১ সালের ইউএস ওপেন থেকে ভেনাস উইলিয়ামস তাঁর নাম প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। ব্যতিক্রমী অনুশীলন আর নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের মাধ্যমে এখনো খেলে যাচ্ছেন টি গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী ভেনাস উইলিয়ামস।

টিম হাওয়ার্ড

ফুটবল বিশ্বকাপ কিংবা ইংলিশ ক্লাব ফুটবলের বদৌলতে টেকো মাথার মার্কিন গোলরক্ষক টিম হাওয়ার্ডকে আমরা অনেকেই চিনি। তিনি বিরল Tourette’s syndrome নামক নিউরন সমস্যায় আক্রান্ত। মাত্র নয় বছর বয়সে তাঁর রোগ ধরা পড়ে। অসুস্থতা নিয়ন্ত্রণ করে তিনি বর্তমান সময়ের একজন সফল ফুটবলার।
সীমাবদ্ধতা নিয়ে দৌড়েই তিনি হয়েছিলেন দ্রুততম মানবী

জিম অ্যাবট

বিখ্যাত মার্কিন বেসবল তারকা জিম অ্যাবট জন্মেছিলেন ডান হাত ছাড়া। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি তাঁর জীবনে। ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকে মার্কিন বেসবল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। সেইবার তাঁর দল স্বর্ণ জেতে। মেজর লিগ বেসবলেও তাঁর ছিল অসাধারণ ক্যারিয়ার।
এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে, যারা শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সব বাধা উপেক্ষা করে সফলতাকে আলিঙ্গন করেছেন। তাই তো তাঁরাই খেলার মাঠে বা জীবনের মঞ্চে সত্যিকারের বিজয়ী!