সাগর ছোটবেলা
থেকেই বাবা-মার
খুব আহ্লাদি
ছেলে। প্রচন্ড
দুষ্ট হওয়া
সত্বেও বাবা-মার
পরম স্নেহ
আদরে বেড়ে
উঠা ছেলেটার
দিনগুলো কেটে
যেত ঢাকা
শহরের অলিতে-গলিতে
পইপই ঘুরে
ঘুরে; বন্ধুদের
সাথে আড্ডা
দিয়ে আর
পাড়ার মাঠে
খেলাধুলা করে।
জীবনের বাস্তবতা
সম্পর্কে যার
কোন ধারণাই
ছিলো না;
ছিলো
পড়ালেখা
নিয়ে চরম
উদাসীন। ক্লাস
টেনে উঠার
পর প্রি-টেস্টে
খারাপ রেজাল্টের
পর যখন
দেখলো আশেপাশের
বন্ধুরা এস
এস সির
জন্য উঠেপড়ে
লেগেছে; তখন
তার মনে
হলো এবার
কিছু করতে
হয়। শুরু
হয়ে গেলো
জীবন যুদ্ধ!
স্বপ্ন দেখতে
শুরু করলো
নিজেকে নিয়ে,
পরিবারকে নিয়ে।
স্কুলের গন্ডি
পেছনে ফেলে
কলেজ জীবনের
শুরু। অতঃপর,
এইচ এস
সি পরীক্ষার
পর সামনে
এসে যায়
ভার্সিটি ভর্তি
যুদ্ধের রণক্ষেত্র।
মা-বাবার
ভালোবাসায় বেড়ে
ওঠা ছেলেটার
স্বপ্নই ঢাকা
ভার্সিটি কিংবা
বুয়েটে পড়ার।
প্রাইভেটে পড়ার
মতো সামর্থও
পরিবারের নেই;
সুতরাং পাবলিক
ভার্সিটিই সই।
যেভাবেই হোক
সাগরকে চান্স
পেতেই হবে
ঢাকা ভার্সিটি
কিংবা বুয়েটে।
কিন্ত এইচ
এস সির
রেজাল্ট আশানুরূপ
না হওয়ায়
বুয়েটে পড়ার
স্বপ্ন ওখানেই
মারা যায়;
বাকি রইল
ঢাকা ভার্সিটি।
অজানার উদ্দেশ্যে
পাড়ি দেওয়ার
মতো ভয়
তার মনে
জেঁকে বসতে
থাকে। ঢাকা
ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট
বের হওয়ার
পর দেখলো
ওয়েটিং! তার
সমস্ত স্বপ্ন
যেন ঝাপসা
হতে শুরু
করলো। পায়ের
নিচের সব
মাটিই যেন
আস্তে আস্তে
সরে যেতে
থাকলো! তবে
কি ছেড়ে
যেতে হবে
পরিবারকে! ছেড়ে
যেতে হবে
প্রিয় শহরটাকেও!
অবশেষে দেশের স্বনামধন্য এক ভার্সিটিতে চান্স পেলো সাগর; অনেক বড় প্রাপ্তির মাঝেও এক অধীরতা কাজ করা শুরু করলো। নতুন শহর, নতুন নতুন মানুষদের সাথে মেশার ভয়, নতুন জীবনে স্থানান্তর , যেখানে সবাই অচেনা। সবচেয়ে বড় ভয় পরিবারকে ছাড়া একা থাকার।
ঢাকা শহর এখন অনেক পিছনে; ট্রেনের চাকার প্রতি আবর্তনে এগিয়ে আসছে ভার্সিটি জীবন। চমক ভাইয়ার “সাড়ে আট হাজার মাইল দূরে” গানটার মতোই মনে হচ্ছে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছে বহুদূরে। যেখানে চাইলেও আর আপনজনদের কাছে পাবে না। শুরু হলো নতুন আরেকটি যুদ্ধ! অবশেষে দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনা শেষে সে পা রাখলো এক নতুন শহরে! পূর্বের সব স্বপ্নই এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুনত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার।
স্বপ্ন বেঁচে থাকুক নতুনত্বের মাঝে
আমাদের অনেকের স্বপ্নগুলো হয়তো সাগরের মতো করে জীবনের বাঁকে বাঁকে পরিবর্তন হয়। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য পরিবার, প্রিয়জনকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে যেতে হয়। ঢাকা শহরে বেড়ে উঠা অধিকাংশ ছেলেমেয়েগুলো গ্রামেগঞ্জের খেটে-খাওয়া ছেলেমেয়েদের মতো না। সোনার চামচ মুখে দিয়ে বেড়ে উঠা ছেলেমেয়েগুলো নিজের খাবারটুকু কিভাবে খেতে হয় তারা জানে না; মা এসে কখন মুখে তুলে দিবেন সেই আশায় বসে থাকতে হয়। সেই ছেলেমেয়েগুলোই নতুনত্বকে সঙ্গী করেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।আত্বনির্ভরশীলতা
বাসার ভালো খাবারটাতেও যার অরুচি সেই ছেলেটিই এখন মেসের মোটা চালের ভাত, ডাল দিয়ে খেয়েই দিন পার করে দিচ্ছে, খাবার নিয়ে নেই কোন অভিযোগ। নিজের কাপড় নিজে ধোয়া থেকে শুরু করে নিয়ম করে সকালে উঠে ক্লাসে যাওয়াটাকেও অভ্যাসের মধ্যে ফেলে দিলো। টিউশনি করে দিব্যি নিজের খরচটাও চালিয়ে নিচ্ছে।স্বাধীন এক মানুষ
বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই হাসিমুখে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হয়ে গেলো সাগর। নতুন শহরে খাপ খাওয়াতে কিছু সময় লেগে গেলেও উপলব্ধি করতে পারলো এ এক নতুন স্বাধীনতা। যেখানে তার অবাধ বিচরণ, কোন কিছুতেই মানা করবার কেউ নেই। পাখি এখন মুক্ত, যেখানে ইচ্ছে ডানা মেরে উড়ে চলে যাওয়া যায়।
পরিবারের চাওয়া, নিজের চাওয়া, ভালোবাসার মানুষটার চাওয়া সবকিছুই যে এক সূতোয় গাঁথা!
ভাতৃত্বের এক নতুন বন্ধন
ক্যাম্পাসের প্রথম কিছুদিন খুব অস্থিরতায় কেটে যাবার পরে ধীরে ধীরে সাগর উপলব্ধি করা শুরু করলো সে আর একা নয়। আশেপাশে অনেক চমৎকার বন্ধুবান্ধব, বড়ভাইকে নিয়ে নতুন এক ভাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠলো। প্রয়োজনের সময় যারা পরিবারের মতোই পাশে এসে দাঁড়ায়। এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা।অন্যরকম পরিবেশ, অন্যরকম ভালোবাসা
ঢাকার মায়াকে পেছনে ফেলে সাগর এখন ক্যাম্পাসের মায়ায় বিভোর। যার সব ভালোবাসাই এখন ক্যাম্পাসকে ঘিরে। ক্যাম্পাসের সবুজ যে তাকে খুব টানে। এ সবুজ শুধু বৃক্ষলতায় নয়, এ সবুজ যেন ছড়িয়ে যাচ্ছে তার প্রতিটি স্পন্দনে স্পন্দনে।জীবনে ভিড় করে অনেক অলিগলি
ঢাকার অনেক অলিগলি ফেলে সাগর আজ নতুন অলিগলির সন্ধানে; স্বপ্নের অলিগলিতে খেলা করছে তার মন। বিস্তৃত ভার্সিটির মতোই বিশাল তার চিন্তাভাবনা। সব স্বপ্নকেই পূর্ণ করার এক অদম্য ইচ্ছা তাকে অকুতোভয় করে তুলছে। ইচ্ছা পূরণের চারটি অমূল্য বছরের যে এখানেই শুরু। পরিবারের চাওয়া, নিজের চাওয়া, ভালোবাসার মানুষটার চাওয়া সবকিছুই যে এক সূতোয় গাঁথা।হয়তো ঢাকাকে পেছনে ফেলে না আসলে জীবনের অনেক কিছুই জানা হত না, অনেক কিছুই শিখা হত না সাগরের। নিজেকে অনেক বেশী অসম্পূর্ন মনে হত। বাবা-মার প্রচন্ড আদরে বেড়ে উঠা ছেলেটা এখন বাবা-মাকে স্বপ্ন দেখায়; স্বপ্ন দেখায় দেশকে এক নতুন ভবিষ্যতের।
0 মন্তব্যসমূহ