পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে ঝকঝকে হাসিমুখ, সাফল্যের কীর্তিমাখা একেকটা ছবি, একেকটা গল্প। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। প্রতিযোগিতার জায়গাটা দিনদিন হয়ে উঠছে তীব্রতর। তুমি যখন এই লেখাটা পড়ছো ঠিক এই মুহূর্তেই পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে কেউ এগিয়ে যাচ্ছে নিরলস প্রচেষ্টায়, অর্জিত হচ্ছে অবিস্মরণীয় সাফল্য।
একবিংশ শতাব্দীর এই তুমুল প্রতিযোগিতার যুগে প্রতি মুহূর্তে উত্থান পতনের অজস্র গল্প ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশে। অনেক সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি জাগিয়েও হারিয়ে গেছে অনেকে, জীবনের গতিময়তার সাথে তাল মিলাতে না পেরে ছিটকে পড়ছে পথ থেকে। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠের মানুষের সংখ্যাও কম নয়। পরিবর্তন আর প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ তাদের ভয়ের বদলে অনুপ্রেরণা যোগায়, সাফল্যের হাতছানি তাদের আরো উদ্যমী করে তোলে।
তাদের কাজের ক্ষেত্রগুলো ভিন্ন, পথচলার গল্পটাও হরেক রকম, কারো সাথে কারোটা মেলে না। কিন্তু একটা জায়গায় মানুষগুলো এক কাতারে- তারা সবাই সফল, এবং তাদের সবার ব্যক্তিত্বে পাঁচটি অনন্য মানসিক দক্ষতা পরিলক্ষিত।
চলো, দেখে নেওয়া যাক সেই দ্যুতিময় গুণাবলীগুলো যা তাদের বাদবাকি সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে।
১. কাজে নেমে পড়া
গোরস্তানগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে দামী
জায়গা!
কেন
জানো?
কারণ
এইখানে
মাটির
নিচে
মানুষগুলোর সাথে
শুয়ে
আছে
অসংখ্য
চমকপ্রদ আইডিয়া, যেগুলো
কোনদিন
কারো
কাজে
লাগেনি। অসংখ্য
জীবন
বদলে
দেওয়া
আবিষ্কার, যেগুলো
কোনদিন
আলোর
মুখ
দেখেনি। অসংখ্য
কালজয়ী সাহিত্য, যেগুলো
কোনদিন
লেখা
হয়নি।
মানুষগুলোর মস্তিষ্কেই রয়ে
গেছে
সব,
কখনো
বাস্তবায়িত হয়নি,
শেয়ার
করা
হয়নি
পৃথিবীবাসীর সাথে।
খুব
প্রচলিত একটা
কথা
আছে
আমাদের
মাঝে,
“প্ল্যান করে
কিচ্ছু
হয়না!”
সত্যি
কথা
হচ্ছে,
প্ল্যান করে
অবশ্যই
কাজ
হয়,
অসম্ভব
ভালো
কাজ
হয়।
কিন্তু
আমরা
বসে
বসে
প্ল্যানই করে
যাই
শুধু,
কাজে
আর
নামি
না,
অজুহাতের পাল্লাই ভারী
হয়
শুধু।
সফল
হতে
চাও?
ভাবাভাবি বাদ
দাও।
কাজ
শুরু
করে দাও এখনই। মাঠে
নেমে
পড়ো!
ঝাঁপিয়ে পড়ো
কর্মযজ্ঞে!
There may be people who have more talent than you, but there’s
no excuse for anyone to work harder than you do
সাফল্য
আসবে
না
মানে?
এমন
সাফল্য
আসবে,
যার
কথা
আগে
কোনদিন
ভাবতেও
পারোনি। আয়ত্ত
করো
গুণগুলো, ছড়িয়ে দাও
বন্ধুদের মাঝে,
মেতে
ওঠো
সাফল্যের উচ্ছ্বাসে।
২. প্যাশন
জোর জবরদস্তি করে না আসলে কিছু হয় না। যে কাজটা করছো, সেটার জন্য যদি তোমার ভালবাসা না থাকে মন থেকে, তাহলে কখনো ভাল কিছু আশা করা যায় না এটা থেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে প্রাণ বের হয়ে যাচ্ছে তোমার, অথচ জানালা খুলে দেখো, কাকডাকা ভোরেও মসজিদ ভরে যাচ্ছে মুসল্লিদের কাতারে। ক্লাস থেকে একবেলা হেঁটে বাসায় ফিরতে ভীষণ কষ্ট তোমার, অথচ শরীরটাকে সুন্দর গড়নে আনতে জিমনেশিয়ামে অমানুষিক পরিশ্রম করে ঘাম ঝরিয়ে চলেছে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ। কেউ কিন্তু তাদের বলে দেয়নি, চাপিয়ে দেয়নি ঘাড়ের উপর, বাধ্য করেনি কাজগুলো করতে। কিন্তু দিনের পর দিন মানুষগুলো নিষ্ঠার সাথে অব্যাহত রেখেছে প্রচেষ্টা। কারণ শুধু একটাই- ভালবাসা।
পড়ালেখা না করলে ফেল করবো, বাসায় বকা খাবো- এজন্য না পড়ে একটু অন্যভাবে ভাবো। জানার জন্য শেখো, পাশ করার জন্য না। একটু ভালবাসা, আগ্রহ আর প্যাশন যদি থাকে তোমার, কোন কাজে কখনো আটকে থাকবে না, কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না কোনদিন।
৩. মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা
শ্রদ্ধেয় শাইখ সিরাজ যখন “মাটি ও মানুষ” করতে গ্রামে গেলেন, সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত এক বিড়ম্বনায় পড়লেন। গ্রামের কৃষক এই শহুরে শার্ট প্যান্ট পরা ফিটফাট মানুষটার সামনে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না কথা বলতে। ভীষণ মুশকিল! তিনি তখন এক মজার কাজ করলেন। জামার হাত পা গুটিয়ে ক্ষেতে বসে পড়লেন কৃষকের পাশে, শুদ্ধ বাংলা ছেড়ে কথা জমালেন কৃষকের বুলিতে। এবার কেটে গেল আড়ষ্টতা, কৃষক তাকে নিজেদের একজন করে ভাবতে পারলো। তারপর তো ইতিহাস!সবখানে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার এই অসামান্য গুণ তোমাকে এগিয়ে দেবে বহুদূর। আফ্রিকান বচনে আছে, “If you want to walk fast walk alone, if you want to walk far, walk together!”
সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হলে সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ার গুণটা অর্জন করতে হবে তোমাকে। সবাইকে তোমার পছন্দ হবে না, সবার সাথে বনবে না। কিন্তু পেশাগত জীবনে এই বাধাগুলো দূর করে কাজ হাসিল করে নেওয়াটাই গড়ে দেবে আর দশজনের সাথে তোমার স্বাতন্ত্র্য।
৪. নাছোড়বান্দা মনোভাব
এক আত্মীয় গল্পটা প্রায়ই বলেন। তিনি যখন ব্যাংকে চাকরি করতেন, তখন এক সহকর্মী ছিলেন যিনি সবসময় ইংরেজিতে কথোপকথন করতেন। অসম্ভব ভুলে ভরা, অশুদ্ধ উচ্চারণে মাখা সেই ইংরেজি শুনলে মনে হতো কানে বিষ বর্ষণ হচ্ছে! সবাই আড়ালে আবডালে হাসাহাসি করতো সেই লোককে নিয়ে। কিন্তু তার কোন ভ্রুক্ষেপ নাই, বলছেন তো বলছেনই, কারো অপমান টিটকারি যেন গায়েই লাগে না তার। তারপর সেই আত্মীয় বদলি হয়ে গেলেন অন্য শাখায়, মাঝে বহু বছর কেটে গেল। একদিন বড় সাহেবের রুমে গিয়ে দেখেন কে যেন খুব চোশত ইংরেজিতে আলাপ করছেন সাহেবের সাথে! কৌতূহল মেটাতে উঁকি মেরে দেখেন আরে এ তো সেই সহকর্মী! ইংরেজিতে কথা বলায় বড় সাহেবকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন! এই মানুষটাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করতো, আজ তো তার যোগ্যতার সামনে মাথা নিচু হয়ে আসছে সকলের!সাফল্য কিন্তু এভাবেই আসে। সাফল্যের উপায় কিন্তু দুইটা না তিনটা না, একটাই। সেটা হচ্ছে লেগে থাকা, কামড়ে ধরে থাকা, ঝুলে থাকা।
৫. ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
Anne Frank এর অসম্ভব সুন্দর একটি উক্তি আছে, ‘Look at how a single candle can both defy and define the darkness.’সবকিছুর মাঝে ভালো-টা খুঁজে নেওয়া সফল মানুষদের অনন্য একটি গুণ। মন ভালো তো দিন ভালো। হাসি জিনিসটা যেমন সংক্রামক, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারটাও তেমনি ছড়িয়ে যায় জন থেকে জনে। খুব সহজ একটা উদাহরণ দেই, ধরো নতুন সাবজেক্টের শিক্ষক প্রথম দিন ক্লাসে এসেই বললেন, “এটা খুব কঠিন সাবজেক্ট, বইয়ের এ-টু-জেড সব মুখস্থ করবা, নাহলে পাশ মার্কস তুলতে একদম হাড় ভাজাভাজা হয়ে যাবে তোমাদের।”
কথাটা শুনেই কেমন বিতৃষ্ণা চলে আসছে না সাবজেক্টটার উপর? অথচ তিনি যদি এভাবে বলতেন, “এই সাবজেক্টটা কিন্তু ভীষণ মজার! এই যে বইটা দেখছো, এটাতে অনেক ইন্টারেস্টিং টপিক আছে মনে রাখার মতো! আমরা ক্লাসে সবাই মিলে খুব আনন্দ নিয়ে মন দিয়ে পড়বো টপিকগুলো, এবার কেউ যেন ৯০ এর নিচে না পায় পরীক্ষায়!”
কেমন ভোজবাজির মত পাল্টে গেলো না আবহটা? দুই ক্ষেত্রেই ফোকাস কিন্তু একই, “মনে রাখা” এবং “মন দিয়ে পড়া”, অথচ দৃষ্টিভঙ্গির তারতম্যের কারণে প্রভাব ফেলছে সম্পূর্ণ বিপরীত!
জীবনটাও কিন্তু এমনই, দৃষ্টিভঙ্গিটা ইতিবাচক রাখো, দেখবে ভোজবাজির মত পাল্টে গেছে সবকিছু!
0 মন্তব্যসমূহ