৫টি ভিন্নরকম স্কুল


তোমার কি জানা ছিল যে বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের একটা নিজস্ব ইউনিভার্সিটি আছে? হ্যাঁ, সেটার নাম হ্যামবার্গার ইউনিভার্সিটি। শিকাগোর এই কর্পোরেট ইউনিভার্সিটি টি রেস্তোরাঁ ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন দিক শেখানোর জন্যেই তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় আশি হাজার শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন এই অন্যরকম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৬১ সালে লন্ডনে একটা স্কুল খোলা হয়, যেটার একমাত্র কার্যকরী নিয়ম ছিল এটাই- “কোনো নিয়ম নেই।তুমি কী কী কোর্স পড়বে সেটা তুমিই ঠিক করবে, ক্লাসে ধূমপান করা, স্কুল গ্রাউন্ডসে মোটরবাইক চালানো- সবকিছুর পারমিশন আছে। এই স্কুলটা অবশ্য সোশ্যাল এক্সপেরিমেন্ট ছিল, এক্সপেরিমেন্টের কাজ শেষ হবার পর বন্ধ করে দেয়া হয়।
লিভারপুল হোপ ইউনিভার্সিটিতে পপুলার মিউজিক স্টাডিজ হিসাবে শুধুমাত্র বিটলস ব্যান্ডের উপরে একটি মাস্টার্স কোর্স পড়ানো হয়। এরকম ভিন্ন ধাঁচের স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি রয়েছে আরো বেশ কিছু। তাদের মধ্যেই কয়েকটা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

. মাইক্রোসফট স্কুল অফ দ্য ফিউচার, যুক্তরাষ্ট্র

ফিলাডেলফিয়া স্কুল ডিস্ট্রিক্ট এবং মাইক্রোসফটের যৌথ উদ্যোগে ওয়েস্ট ফিলাডেলফিয়ার ফেয়ারমাউন্ট পার্কে ২০০৬ সালে স্থাপিত হয় এইডিজিটালস্কুলটি। ৯ম থেকে ১২তম গ্রেড পড়ানো এই স্কুলটির বিশেষত্ব হচ্ছে এইখানে বইখাতার কোনো বালাই নেই, শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ-ট্যাব ইত্যাদি ব্যবহার করে পড়াশোনা করে।
মাইক্রোসফটেরওয়াননোটএপ্লিকেশন ব্যবহার করে তারা ক্লাস নোট নেয়, তাদের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যে বরাদ্দ লকার খুলতে হয় চিপড আইডি কার্ড দিয়ে। সাধারণ স্কুলের মতগুড’, ‘এভারেজ’, ‘এক্সেলেন্টইত্যাদি গ্রেড দেয়া হয় না সেখানে, তাদের গ্রেডএডভান্সডথেকে শুরু হয়েনট অন দ্য রাডার’- গিয়ে শেষ হয়।
সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাসের সময়টা একটা সাধারণ স্কুল-ডে কে নয় বরং একটা কর্মদিবসকে অনুকরণ করে সাজানো হয়েছে। এইঅতি-ডিজিটালস্কুলটি তাদের আধুনিক টেকনোলজির জন্যে শুরুর দিকে কিছুটা প্রশাসনিক একাডেমিক সমস্যার সম্মুখীন হলেও, এখন এটি ভীষণ জনপ্রিয় একটি স্কুল।

. ট্রেন প্ল্যাটফর্ম স্কুলস, ভারত

ভারতের ওড়িশার স্কুল শিক্ষিকা ইন্দরজিত খুরানা যখন ট্রেনে করে কাজে যেতেন, তখন স্টেশনের পথশিশু আর শিশুশ্রমিকদের দেখে তাঁর তাদের জন্যে কিছু করার ইচ্ছে হলো। সেই ইচ্ছা থেকেই ১৯৮৫ সালেরুচিকা স্কুল সোশ্যাল সার্ভিস অর্গানাইজেশন’- এর যাত্রা শুরু, আর সেই সাথেই যাত্রা শুরু হয় এই ট্রেন প্ল্যাটফর্ম স্কুলের।
মাত্র একটা স্কুল নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন প্রায় ,০০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে ট্রেন প্ল্যাটফর্ম স্কুল নামের এই প্রোগ্রামে। প্রতি ট্রেন স্টপে তারা একত্র হয়, ফিল্ডট্রিপ, গান, নাটক, পুতুলনাচ, ফ্ল্যাশকার্ড- এইসবের মাধ্যমে তারা লিখতে পড়তে শেখে। তাদেরকে খাবার এবং ওষুধপাতি ফ্রি দেয়া হয়, তারা যেকোন সময় চাইলে প্রোগ্রাম থেকে ছুটি নিয়ে পরে আবার শুরু করতে পারে।
ট্রেন প্ল্যাটফর্ম স্কুল প্রোগ্রামটি এভাবে ভারতের দরিদ্র অবহেলিত শিশুদের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে।
মজার ব্যাপার হলো এই নৌকোগুলি একই সাথে স্কুল আর স্কুলবাস হিসাবে কাজ করে।

. ডংঝং মিড-কেভ প্রাইমারি স্কুল, চায়না

চীনের গুইঝু প্রদেশের এক পাহাড়ি গ্রামে অবস্থিত এই স্কুলটার নাম, ‘ডংঝংশব্দের মানেই হচ্ছেগুহার ভেতর প্রদেশটা খুব গরিব বলে সেখানকার মানুষেরা ঠিক করলো, টাকাপয়সা দিয়ে স্কুল বিল্ডিং বানানোর কী দরকার, এই গুহার মধ্যে একটা স্কুল করে ফেললেই হয়।
১৯৮৪ সালে যখন এই স্কুলের যাত্রা শুরু হয় তখন জন শিক্ষক আর ১৮৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু করা হয়েছিল। কিছু কিছু শিক্ষার্থী দিনে ঘন্টা ভ্রমণ করে এই স্কুলে পড়াশোনা করতে আসতো। কার্যক্রম শুরু হবার ২৩ বছর পরে চায়না সরকার এই স্কুলটি বন্ধ করে দেয়, সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “চায়না কোনো গুহাবাসীদের সমাজ নয়

. ব্রুকলিন ফ্রি স্কুল, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র

১৯৬০/৭০ দশকেরফ্রি স্কুল মুভমেন্টনামক আন্দোলনের দর্শন ফলো করে ২০০৪ সালে ব্রুকলিনের ফোর্ট গ্রিন নামক জায়গায় ব্রুকলিন ফ্রি স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। এই স্কুলটি দুইটি এজ গ্রুপে বিভক্ত, ১১-১৮ বছর বয়সীদের জন্যে আপার স্কুল, আর -১১ বছর বয়সীদের জন্যে লোয়ার স্কুল। ব্রুকলিন ফ্রি স্কুলের নাম শুনেই হয়তো কিছুটা আন্দাজ করা যায় যে, এখানে কারিকুলাম বলতে কোনো কিছুই নেই। যার যা খুশি পড়তে পারে। শিক্ষার্থীরাই স্কুলের নিয়মকানুন তৈরি করে, ক্লাস চালায়, আর শিক্ষকরা এখানে মডারেটরের ভূমিকা পালন করেন।
কেউ কেউ একা থাকতে পছন্দ করে, তারা বেছে নেয়ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্টাডিজ’, যা চলতে পারে বছরের পর বছর। আরেকটা ক্লাস হয়তোদ্য ওয়্যার এন্ড আরবান স্টাডিজশীর্ষক, যেখানে শিক্ষার্থীরাদ্য ওয়্যারনামক টিভি শো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করে। কেউ কেউ আবার অন্য ক্লাসে শহরের সব রেস্তোরাঁর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করতে ব্যস্ত, যাতে লাঞ্চের জন্যে কোথায় যাওয়া যায় সেটা ঠিক করা সহজ হয়।
প্রতি সপ্তাহে ব্রুকলিন ফ্রি স্কুলে টিচার-স্টাফ স্টুডেন্টদের নিয়ে মিটিং হয়, যেখানে তারা সামনের সপ্তাহের জন্যে প্ল্যানিং করে। পরীক্ষা, হোমওয়ার্ক, রেজাল্ট? না, নেই।

. বোট স্কুলস অফ বাংলাদেশ

বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর হওয়া বন্যার কথা তো আমরা সবাই জানি। বন্যার পানির জন্যে সৃষ্টি হওয়া যতসব সমস্যার মোকাবেলা করার জন্যে সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা নামের এনজিওটি একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া দিলো- তারা পানির মধ্যে ভাসমান বাসাবাড়ি স্কুল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বানিয়ে ফেললো। তাদের এই কার্যক্রমের কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। এই সংস্থার মোটামুটি ১০০টির মত স্কুল আছে। এই নৌকো-স্কুলগুলির প্রত্যেকটিতে একটা করে ল্যাপটপ আছে, স্কুলগুলি চলে সৌরশক্তিতে।
মজার ব্যাপার হলো এই নৌকোগুলি একই সাথে স্কুল আর স্কুলবাস হিসাবে কাজ করে। নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্যে খুবই ইফেক্টিভ আইডিয়া সন্দেহ নেই। নৌকোগুলো ঘাটে ঘাটে, নদীর তীরে তীরে ঘুরে ঘুরে ছাত্রছাত্রী উঠায়, আর তারপর যেকোনো এক জায়গায় থেমে ক্লাস পরিচালনা করা হয়। এক গ্রুপের ক্লাস শেষ হলে তাদের বাড়ির কাছে নামিয়ে দেয়া হয় এবং আরেক গ্রুপকে তুলে নেয়া হয়। ২০০২ সালে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর হতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০,০০০ শিক্ষার্থী উপকৃত হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ